নববর্ষে নতুন বাড়ি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নতুন ঠিকানা নিউটাউনে — সব শাখা এবার এক ছাতার নিচে

নতুন বছর, নতুন দফতর। বাংলা নববর্ষে নিজের ঠিকানা বদলাচ্ছে দেশের শীর্ষ তদন্ত সংস্থা সিবিআই। এতদিন কলকাতা শাখার দফতর ছিল দক্ষিণ কলকাতার নিজাম প্যালেস এবং সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে। এবার থেকে সেই পরিচিত ঠিকানাগুলি আর থাকছে না। সিবিআইয়ের নতুন আস্তানা হতে চলেছে নিউটাউনের এনবিসিসি স্কোয়ারে।

নতুন দফতরের প্রস্তুতিও শেষের পথে। নববর্ষেই নতুন দফতরে বসে তদন্ত শুরু হতে পারে বলে সূত্রের খবর। ঝাঁ চকচকে ১৪ তলা ভবনের চারটি তল জুড়ে তৈরি হয়েছে নতুন সিবিআই অফিস। এই প্রথম কলকাতা শাখার সমস্ত বিভাগ এক ছাতার নিচে আসতে চলেছে।

নতুন দফতরে থাকবে অ্যান্টি করাপশন ব্রাঞ্চ (ACB), স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ (SCB), ইকনমিক অফেন্স ব্রাঞ্চ (EOB), ব্যাঙ্ক সিকিউরিটিস অ্যান্ড ফ্রড ব্রাঞ্চ (BSFB)।

 

এতদিন পর্যন্ত এই বিভাগগুলি দুটি আলাদা স্থানে কাজ করত। অ্যান্টি করাপশন ব্রাঞ্চ-এর অফিস ছিল নিজাম প্যালেসে, আর স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ, ইকনমিক অফেন্স ব্রাঞ্চ অফিস ছিল সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে। এই বিভাজনের ফলে সমন্বয় সমস্যা দেখা দিত বলে অভিযোগ ছিল। সব বিভাগকে একত্রিত করতে বহুদিন ধরেই পরিকল্পনা চলছিল। শেষমেশ গত বছর কলকাতায় এসে নিজে হাতে নিউটাউনের এই অফিস পছন্দ করে যান সিবিআই ডিরেক্টর। তারপরই শুরু হয় নির্মাণ ও স্থানান্তরের তোড়জোড়।

গত কয়েকদিন ধরে পুরনো অফিস থেকে একে একে গুরুত্বপূর্ণ নথি, দাপ্তরিক ফাইল, প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র—সবই সরানো হচ্ছে নিউটাউনের নতুন ভবনে। সিবিআই আধিকারিক থেকে শুরু করে অফিস সহকারীরা দিনরাত এক করে নতুন অফিস গোছাতে ব্যস্ত। সরানো হচ্ছে কেস সংক্রান্ত স্পর্শকাতর সমস্ত সামগ্রীও। গোটা প্রক্রিয়া যাতে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে বিশেষ তদারকি টিম।

নিরাপত্তার প্রশ্নেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এনবিসিসি স্কোয়ারে ইতিমধ্যেই স্থানান্তরিত হয়েছে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)-র অফিসও। এই ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (CRPF)। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন জওয়ান চব্বিশ ঘণ্টা সেখানে নজরদারিতে থাকবেন। তাঁদের জন্য পৃথক অফিসরুম ও আবাসনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

তবে অফিস বদলের এই সিদ্ধান্তে কর্মীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভও আছে। অনেকে মনে করছেন, নিজাম প্যালেস বা সল্টলেকের তুলনায় নিউটাউন অনেকটাই দূরে হওয়ায় যাতায়াতে সমস্যা হবে। কেউ কেউ এই স্থানান্তরকে ‘একতরফা সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করছেন।

তবু সংস্থার শীর্ষকর্তারা আশাবাদী। তাঁদের যুক্তি, সব শাখা এক ছাতার নিচে এলে কাজের গতি বাড়বে, সমন্বয় বাড়বে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া আরও কার্যকরী হবে। নতুন দফতরে আধুনিক পরিকাঠামো, উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা ও পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়েছে বলেও দাবি সিবিআই কর্তৃপক্ষের।

সব কিছু ঠিকঠাক চললে এবারের বাংলা নববর্ষেই নতুন ঠিকানায় আনুষ্ঠানিকভাবে পথ চলা শুরু করবে কলকাতা শাখার নতুন সিবিআই দফতর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 3 =