সরকার আলোচনায় বসুক ডিএ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে, পরামর্শ হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির

ডিএ দাবি নিয়ে এবার আলোচনার নির্দেশ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চের। বৃহস্পতিবার ডিএ আবেদন নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত এমনটাই জানালেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবাঙ্গনম। খুব স্পষ্ট ভাষাতেই এদিন তিনি জানান,সরকারের সঙ্গে ডিএ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা শুরু হওয়া উচিত। এই আলোচনায় আন্দোলনকারীদের তরফে ৩ জন থাকতে পারেন। সরকারের তরফে মুখ্যসচিব বা এই স্তরের আধিকারিক আলোচনায় থাকুন’, এমনটাই পরামর্শ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবাঙ্গনমের। পাশাপাশি উদ্বেগপ্রকাশ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এও জানান, ‘কর্মচারিরা বারবার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। সরকারের পদক্ষেপের প্রয়োজন।‘ প্রসঙ্গত, এদিন সরকারি পক্ষের আইনজীবী এও জানান, কর্মচারিদের এই কর্মবিরতির জেরে সরকারের ৪৩৬ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এই প্রসঙ্গেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান বিচারপতি৷
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে কর্মচারিদের সঙ্গে রাজ্যকে আলোচনায় বসার যে নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবাঙ্গনম তাতে রাজ্য সরকারের তরফে থাকবেন মুখ্যসচিব, অর্থসচিব সহ দ্বায়িত্বশীল পদে থাকা আধিকারিকেরা। সঙ্গে কর্মচারি সংগঠনের তরফে কোন তিনজন আলোচনায় যোগ দেবেন, তাঁদের নাম আগে থেকে দিয়ে দিতে হবে বলেও জানান তিনি। আর এই আলোচনা থেকে ডিএ সমস্যার ইতিবাচক সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে আশা আদালতের।
প্রসঙ্গত, ডিএ-র দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন রাজ্য সরকারি কর্মীদের একাংশ। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ এবং বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। প্রাপ্য ডিএ না পাওয়ায় আন্দোলনকারীরা কর্মবিরতির ডাকও দিয়েছেন। এর জন্য একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে বলে অভিযোগ। তার প্রতিবাদেই হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার। সেই মামলার শুনানিতেই বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয় বলে জানা গিয়েছে৷ শুনানি চলাকালীন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘২০০৯ রোপা রুল নিয়ে রাজ্যের নির্দিষ্ট ব্যাখা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য এসএলপি দায়ের করেছে। ১১ এপ্রিল শুনানি। রাজ্য ৬ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দিচ্ছে। তবে ক্যালকুলেশন নিয়ে কিছু বক্তব্য আছে।’
এরই প্রত্যুত্তরে সরকারি কর্মচারিদের আইনজীবীর সওয়াল জবাবে জানান, ‘কর্মবিরতির জন্য রাজ্যের প্রশাসনিক কাজের কোনও ক্ষতি হলে অতিরিক্ত কাজ করে তা পুষিয়ে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে ছুটির দিনে কাজ করবেন সরকারি কর্মচারীরা।’ এরপরেই আদালত জানায়, ‘সরকারি কর্মচারিরা অতিরিক্ত কাজ করবে। ১৪, ১৫ এপ্রিল ছুটি। তাহলে ২১ এপ্রিল কাজ করবে সরকারি কর্মচারিরা।‘ তবে একইসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এও জানান, ‘অনেক মানুষ দূর থেকে ট্রেনে – বাসে করে আসেন। আজকেও কাজে আসবেন । কাজ হবে না ফেরত যাবেন। সবাই তো আর্থিক ভাবে সেভাবে সক্ষম নন।’ এরপরেই হাসপাতাল এবং অন্য জরুরি পরিষেবার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। উত্তরে তাঁকে জানানো হয়, ‘সব জরুরি পরিষেবাই স্বাভাবিক রয়েছে।‘
এদিকে সরকার আলোচনায় বসুক, এ কথা বারবারই বলেছেন ডিএ আন্দোলনকারী বা সংগ্রামী যৌথমঞ্চের প্রতিনিধিরা। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও তাঁদের আলোচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি, তাই আন্দোলনের তীব্রতাও কমেনি।
বৃহস্পতিবার এক আন্দোলনকারী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকারি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য রাজ্যের একটা কমিটি থাকা দরকার। সেরকম কোনও কমিটি সরকার বানায়নি।’ তবে আদালত বলার পরও সে কথা না মানলে আদালত অবমাননার মামলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কে অশ্রাব্য ভাষা না বলে, দাবি পূরণ করুন, শূন্যপদ স্বচ্ছভাবে পূরণ করুন।’ একইসঙ্গে এ হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন, সরকার এটা নিয়ে আর সুপ্রিম কোর্টে যাবে না। গেলে আবার কর্মবিরতির পথে যেতে হবে বলেও দাবি করছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারও কর্মবিরতির ডাক দেয় যৌথমঞ্চ। এদিন দুপুর থেকে বিভিন্ন সরকারি দফতরে চলছে বিক্ষোভ। যৌথমঞ্চের প্রতিনিধিরা জানান, কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে আন্দোলনকারীরা এও জানান, সরকারকে বিবেচনা করতে হবে, তারা আমাদের দাবি মানবে মানবে কি না। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁদের বক্তব্য, ‘আপনার কর্মীরা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। হাইকোর্টকে মান্যতা দিন। যোগ্য সম্মান দিয়ে আলোচনায় বসুন। নিশ্চয় সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + eight =