‘স্কুল মিস্টির দোকান নয়, ইচ্ছামতো দামবৃদ্ধি হবে।‘ বার্ষিক ফি বৃদ্ধি মামলায় এমনই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের। শুধু তাই নয়, ফি বৃদ্ধি নিয়ে শহরের দু’টি অভিজাত বেসরকারি স্কুলকে কার্যত ভর্ৎসনাই করতে দেখা যায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুকে। মিস্টির দোকানের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘যে একটি দোকান কোনও মিষ্টি ১০ টাকায় বেচবে আর কোনও দোকান সেই মিষ্টি ৫ টাকায় বেচবে।’ এরই পাশাপাশি আদালতের তরফ থেকে এও জানানো হয়, বেসরকারি সংস্থা বলেই যেমন খুশি ফি নির্ধারণ করা যায় না। তবে এখনও এ নিয়ে কোনও নির্দেশ জানায়নি আদালত। গরমের ছুটির পর জুনে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। বিচারপতির কথায়, ‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বহু অভিভাবক-পড়ুয়া এর সঙ্গে জড়িত। এটাকে অ্যাড্রেস করতেই হবে।’ একইসঙ্গে আদালতের তরফ থেকে এও জানানো হয়, কী নিয়মে ফি বাড়াতে পারে বেসরকারি স্কুল, তা আগামী শুনানিতে জানাতে হবে সব পক্ষকে।
প্রসঙ্গত, বিচারপতি বসুর এজলাসে সম্প্রতি বিড়লা ভারতী এবং সাউথ পয়েন্ট স্কুলের বিরুদ্ধে লাগামছাড়া ফি বৃদ্ধি নিয়ে মামলা দায়ের করেন অভিভাবকদের একাংশ। বিড়লা ভারতীর বিরুদ্ধে অভিভাবক ফোরামের অভিযোগ, সেখানে বিভিন্ন ক্লাসে ২২-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ফি বাড়ানো হয়েছে। সাউথ পয়েন্টে ১০০ শতাংশের বেশি ফি বাড়ানোর অভিযোগে মামলা হয়।
যদিও দু’টি স্কুলই আদালতে দাবি করে, অতীতে ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে বলা হয়েছিল, কোভিডের ফলে দু’বছর যে ক্ষতি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে সব স্বাভাবিক হয়ে গেলে ফি বাড়িয়ে তা পূরণ করা যাবে। সাউথ পয়েন্টের আইনজীবী আরও দাবি করেন, বেসরকারি স্কুল ট্রাস্ট বা সোসাইটি দ্বারা পরিচালিত হয়। সেখানে অভিভাবকরা ফি জেনেই পড়ুয়াদের ভর্তি করেন। তা বাড়ানোর ব্যাপারে অনুমোদনকারী বোর্ড বা রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
যদিও বিচারপতি এই যুক্তির সঙ্গে সহমত হননি। তিনি বলেন, ‘আপনি কোনও পড়ুয়ার ফি ডবল করে দিতে পারেন না। এর কোনও ব্যাখ্যা আপনাদের কাছে নেই। ডিভিশন বেঞ্চের যে নির্দেশের কথা বলা হচ্ছে, সেটা কোভিড কালে একটা আপৎকালীন পরিস্থিতির উপর দেওয়া হয়েছিল।’
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকার, অভিভাবকদের আইনজীবীরাও। দু’টি স্কুলই সিবিএসই বোর্ডের হওয়ায় তাদের তরফেও একজন আইনজীবী ছিলেন। বোর্ডকে বিচারপতি জিজ্ঞাসা করেন, ‘ফি নিয়ন্ত্রণে কি আপনাদের কোনও ভূমিকা আছে?’ বোর্ড জানায়, এটা রাজ্যের উপর ছাড়া হয়েছে। এরপরই বিচারপতির প্রশ্নের মুখে রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়, ফি বাড়াতে হলে তাদের অনুমতি লাগে।
এরই প্রেক্ষিতে বিড়লা ভারতী স্কুলের অভিভাবক ট্রাস্টের তরফে পলাশ মিত্র জানান, ‘এমন কোনও নির্দেশ যে রাজ্য সরকার দিয়েছে, তা আমাদের জানা ছিল না। স্কুলও এমন বিজ্ঞপ্তির কথা জানায়নি। এটা জানার পর থেকে শতাধিক অভিভাবক পুরোনো হারেই ফি দিচ্ছেন।’ সাউথ পয়েন্টের মামলাকারী অভিভাবক সৌপর্ণ চৌধুরীর অভিযোগ, কেবল পঞ্চম শ্রেণিতেই ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তুলনায় চলতি বছর ১৪৫ শতাংশ ফি বেড়েছে। দু’টি স্কুল কর্তৃপক্ষই অবশ্য বলছেন, আদালতে যা বলার বলা হবে। অল্প ক’জন অভিভাবক এমন সমস্যা তৈরি করছেন। এ ব্যাপারে রাজ্যের ভূমিকারও সমালোচনা করেন ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশনের সুপ্রিয় ভট্টাচার্য। আদালত সূত্রে খবর, মামলার পরবর্তী শুনানি ৫ জুন।