বীরভূমের মল্লারপুরে নাবালকের মৃত্যুর ঘটনায় নাবালকের পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ মৃতের পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরই পাশাপাশি এই মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে হাইকোর্ট। হাইকোর্ট স্পষ্ট জানায়, আগামী দিনে কোনও নাবালকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আগে পশ্চিমবঙ্গ জুভেনাইল জাস্টিস আইন (২০১৭) মেনে চলতে হবে পুলিশকে। প্রসঙ্গত, মামলাটি ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের। সেই বছর পুজোর সময়ে সপ্তমীর রাতে ফোন চুরির অভিযোগে শুভ মেহেনা নামে এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। তাকে মল্লারপুরের লকআপে নিয়ে আসে পুলিশ। এর পরদিন সকালে গ্রামে পৌঁছয় তার মৃত্যুর খবর। পুলিশের দাবি ছিল, লক আপে আত্মঘাতী হয়েছে ওই কিশোর। উদ্ধার করে চিকিৎসা করানোর আগেই মৃত্যু হয়। কিন্তু কিশোরের পরিবার ও গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশই পিটিয়ে মেরে ফেলেছে ওই কিশোরকে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। এদিন শুনানির সময়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্য স্পষ্ট করে দেন, নাবালকদের গ্রেফতার করলে থানার লকআপে তাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করা উচিত, তার প্রশিক্ষণ থাকা উচিত কর্তব্যরত পুলিশ কর্তাদের। যদি না থাকে, পুলিশকে সে বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
সেই সময় এই মৃত নাবালকের প্রতিবেশী মঞ্জু বাউড়ি দাবি করেছিলেন, কয়েকজন মহিলা ওই নাবালককে ছাড়ানোর জন্য মল্লারপুর থানায় গেলে পুলিশ ছেলেটিকে মারধর করেছিল। সংমগ্র ধটনা সামনে আসার পর গোটা পরিস্থিতিতে কার্যত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মল্লারপুর। ক্ষুব্ধ জনতা জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনাটি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক মোড়ও নেয়। এই ঘটনায় বোলপুর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির যুব মোর্চার নেতারা। প্রতিবেশীদের অভিযোগকে সামনে রেখে পুলিশের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে দেখা যায় তাঁদের।
এদিকে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দাবি করেন, এই গোটা ঘটনায় রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় তৃণমূলের নেতারা এ দাবিও করেন, এই ঘটনাকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে চাইছে গেরুয়া শিবির। এরপরই এই মামলার জল গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত।