রাজাশেখর মান্থার এজলাসের বাইরে বিক্ষোভে নাম জড়াল ৮৬ জনের, শাসকদলের অনুগামী আইনজীবীদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের পরিবেশ

হাইকোর্টে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসের বাইরে বিক্ষোভের ঘটনায় নাম জমা পড়ল ৮৬ জন আইনজীবীর। আর তাতেই বয়কটের পক্ষে থাকা শাসকদলের অনুগামী আইনজীবীদের মধ্যেও তৈরি হল কার্যত এক গৃহযুদ্ধের পরিবেশ। এদিকে এই দীর্ঘ চালিকা দেখে মঙ্গলবার আদালতের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় বার অ্যাসোসিয়েশনকে। শুধু তাই নয়, তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও এদিন মন্তব্য করতে দেখা যায় তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চকেও।
বিচারপতি টিএস শিবাগ্ননমের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এদিন যখন ৮৬ জনের তালিকা হাতে পান, তখন এজলাসের বাইরে শাসকদলের অনুগামী আইনজীবীদের একাংশ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন। মূলত কাদের নাম ওই তালিকায় রয়েছে, বারের শীর্ষ পদাধিকারীদের কাছে তা জানতে চেয়ে চিৎকার করতে থাকেন তাঁরা। যা এজলাসে বসে শুনে নির্দেশ ঘোষণা করতে গিয়েও নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে একটু হলেও চিন্তা করতে হয় বিচারপতিদের। থমকাতে হয় বিচারপতিদেরও। এদিনের এই বিশাল তালিকা দেখে বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষকে বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি আদালতকে ভয় পান না? সম্মানও করেন না?’ একইসঙ্গে এও জানান, ‘আমরা দেখেছি এজলাসে আইনজীবীদের ঢুকতে বাধা দেওয়ায় ১০ থেকে ১২ জন যুক্ত ছিলেন। আমরা চাইলেই কড়া পদক্ষেপ করতে পারি। সবার অবস্থা এখন পিতামহ ভীষ্মের মতো, সবাই অবিচার দেখেছেন, কিছু করতে পারছেন না। আদালতকে দুর্বল ভাববেন না।’
এদিকে বিচারপতি টিএস শিবাগ্ননমের পর্যবেক্ষণ, ৮৬ জন আইনজীবী কখনওই আইনজীবীদের ঢুকতে বাধা দিচ্ছিলেন না। বিচারপতিদের বক্তব্য, আমরা চাই প্রতিষ্ঠানের সম্মান রক্ষা করতে, কিন্তু সত্যিটা সামনে আসা দরকার। আমরা চাইলেই আদালত অবমাননার রুল জারি করতে পারি।‘ এই প্রসঙ্গে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় জানান, ‘সংশ্লিষ্টরা ক্ষমাপ্রার্থনা করলে আমরা এই সমস্যার সম্মানজনক সমাধানও করতে পারি। অযথা বিষয়টা জটিল করা হলো।’
এরপরই আদালতের তরফ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়, রাজ্য বার কাউন্সিল আদালতকে সাহায্য না করতে পারলে জাতীয় বার কাউন্সিলের সাহায্য নেওয়া হবে। তখন সিদ্ধান্ত তাদের হাতে থাকবে। বিচারপতি শিবাগ্ননমের মন্তব্য, ‘রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল হাতজোড় করে এজলাস বয়কটকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। তাতেও বিক্ষোভকারীরা শোনেননি। এর থেকে লজ্জাজনক আর কিছুই হতে পারে না।’ এরই পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ, রাজ্য বার কাউন্সিল এ বার বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের শনাক্ত করবেন। জাতীয় বার কাউন্সিলের সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদান করতে হবে। দু’টি সংস্থা আলাদা আলাদা রিপোর্ট পেশ করবে।
অন্য দিকে বিচারপতি মান্থার বাড়ি ও হাইকোর্ট এলাকায় পোস্টার লাগানোর ঘটনায় ৬ সন্দেহভাজনকে এ দিন হাজির করে পুলিশ। তাঁদের বক্তব্য হলফনামা আকারে জমা দিতে বলে আদালত। পুলিশ জানায়, দু’টি প্রেস থেকে বিতর্কিত পোস্টার ছাপা হয়েছিল। সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্যে এই পোস্টার ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। এরপরই পুলিশ তদন্তে অযথা বিলম্ব করছে বলেও অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় বিচারপতি শিবাগ্ননমকে। এদিকে আবার বয়কটপন্থী জুনিয়রদের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে বারের শীর্ষকর্তাদেরও বিকেলে বৈঠক করে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাসও দিতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − fourteen =