কলকাতা: সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট লেখক চরিত্র লালমোহনবাবু থাকলে নতুন উপন্যাস লিখে ফেলতেন, যার শিরোনাম হত ‘হাইকোর্টে হাতাহাতি।’ হাঁসখালি গণধর্ষণ চলাকালীন মঙ্গলবার হাইকোর্ট চত্বরের বাইরে বেধে গেল একেবারে হুলস্থুল কাণ্ড। হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠীর আইনজীবীরা। উত্তেজনার পারদ এতটাই চড়ে গিয়েছিল যে একজন আরেক জনকে কামড়ে দিতেও পিছপা হননি বলে অভিযোগ। আর এই পরিস্থিতি দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছেন অনেকেই।
হাইকোর্টের এক বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনা নিয়ে বার অ্যাসোসিয়েশনের শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠীর আইনজীবীরা হাতাহাতি, মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। এক আইনজীবী অন্য একজনের হাতে কামড়ও বসান বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল যে, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কাছে ছুটতে হয় আইনজীবী কল্লোল বসুকে। মঙ্গলবার বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা হাইকোর্টের এক বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করাতে চাইলে তাতে অমত প্রকাশ করেন সংগঠনের বিরোধী সভাপতি আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। তা নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। কিন্তু, বিষয়টি সেখানে থেমে যায়নি। ক্রমেই সেখান থেকে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে। হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দু’পক্ষের আইনজীবীরা। প্রবল হট্টগোলের মধ্যে আইনজীবী কল্লোল বসু ছোটেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কাছে। তাঁকে গিয়ে আবেদন করে জানান, আদালত প্রাঙ্গণে নজিরবিহীন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। আরও পুলিশ মোতায়েন করার জন্য প্রধান বিচারপতিকে আবেদন করেন তিনি। আদালত চত্বরের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা দেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তাঁদের থামতে বলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি জানান একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি চলছে। যদিও বাইরে তখন আইনজীবীদের মধ্যে বচসা চলছে। প্রধান বিচারপতি শান্ত হওয়ার কথা বলেন। কিন্তু, কোনও দিকে গুরুত্ব না দিয়ে হাতাহাতি শুরু করে দেন আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছেন বার কাউন্সিলের সভাপতি তথা বিধায়ক অশোককুমার দে। একাধিক মামলায় বিচারপতির বেশ কিছু মন্তব্যের সমালোচনা করতে শোনা গিয়েছে আইনজীবীদের একাংশকে। এদিন এই ঘটনা প্রসঙ্গে আইনজীবী তথা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘নির্দিষ্ট একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করার চেষ্টা চলছে। তিনি নিজেও আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ করেছেন।’ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। বলেন, ‘আগামিদিনে হয়তো হাইকোর্টের বিচারপতিদের উপরও হামলা হবে। নৈরাজ্যের রাজ্য বাংলার এ এক নতুন অবদান।’