গ্রুপ ডি- মামলায় ২ হাজার ৮২০ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের

স্কুলের গ্ৰুপ ডি কর্মী নিয়োগ মামলায় বড় সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা হাই কোর্টের।  বৃহস্পতিবার ২৮২০ জনের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিল আদালত।একইসঙ্গে এও নির্দেশ দেওয়া হয় যে, শুক্রবারের মধ্যে এসএসসি ও বোর্ডকে এই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে।এখানেই শেষ নয়, পাশাপাশি এসএসসিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়, এই ২৮২০ জনের নাম, ঠিকানা সহ বিস্তারিত তালিকা শুক্রবারের মধ্যে ওয়েবসাইটে আপলোড করার।

উল্লেখ্য,বৃহস্পতিবার  বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় গ্রুপ ডি এই চাকরির সুপারিশ বাতিলের নির্দেশ দেন। আর তা কর্যকর করতে হবে শুক্রবারের মধ্যে। বিচারপতির নির্দেশ, যারা কারচুপি করেছে তাদের প্রত্যেকের চাকরির সুপারিশ বাতিল করতে হবে। এদের তালিকা আবার নতুন করে আপলোড করতে হবে। এর জন্য নোটিস দিতে হবে। সেই সঙ্গে ৬ হাজার ৯৮৮ জন চাকরিপ্রার্থী, যারা অপেক্ষারত রয়েছেন, তাঁদের তালিকা থেকে ওই শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। অপেক্ষমান তালিকায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কারও ওএমআর শিটে যদি পরবর্তী সময়ে বিকৃতি পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও এদিন হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এরই রেশ ধরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘দেখা যাক, কার অদৃশ্য হাত আছে এসবের পিছনে।’

একইসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এও জানান, এদিন এসএসসির তরফে আদালতে জানানো হয়, প্রায় সাড়ে চার হাজার ওএমআর শিটের মধ্যে ২ হাজার ৮১৯টি ওএমআর শিটে গরমিল হয়েছে বলে দেখা গিয়েছে। সেই কথা শুনে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন এসএসসিকে বলেন, ‘যদি আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পান কোনও কারচুপি করা হয়েছে, তাহলে পদক্ষেপ করতেই হবে। অনেক সময় দিয়েছি। এবার তারা আসতে বাধ্য এই আদালতে।এরপর কিছুদিন জেলে থাকার ব্যবস্থা করব।’ এদিকে যেহেতু এসএসসি কেবল নিয়োগের সুপারিশ করে, তাই শুক্রবার দুপুর ১২ টার মধ্যে এই চাকরির সুপারিশ বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি মধ্য শিক্ষা পর্ষদকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে সেই নিয়োগ বাতিল করা হয়।  পাশাপাশি কমিশনের তরফে আদালতকে শুক্রবার হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, সিবিআই এর সঙ্গে কোন ওএমআর শিটগুলিকে মিল পাওয়া গিয়েছে। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, যাঁরা এই কারচুপি করেছিলেন, তাদের বরদাস্ত করা হবে না। একদিনও তাদের চাকরিতে রাখা যাবে না।

এদিকে সূত্রে খবর, এসএসসি গ্রুপ ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট শূন্যপদ ছিল ৩৯৫৬ টি। এসএসসি সুপারিশপত্র দিয়েছিল ৩৮৮০ জনের। প্যানেলে নাম ছিল ৩৫০২ জনের এবং অপেক্ষমান তালিকায় ছিলেন ৬৯৮৮ জন। তাঁদের মধ্যে স্কুলে চাকরি পেয়েছেন ১৯১১ জন। শুক্রবার দুপুর ১২ টা ৫ মিনিটে সুপারিশ বাতিল করবে এসএসসি। বোর্ড ১২ টা ১০ মিনিটে ওয়েবসাইটে তুলবে নিয়োগ বাতিলের তালিকা।

প্রসঙ্গত, আদালতের নির্দেশ অনুসারে আগেই এসএসসির গ্রুপ ডি প্রার্থীদের ওএমআর শিট প্রকাশ করা হয়েছিল। এসএসসির এই ওয়েবসাইটে ৪৪৮৭ জন প্রার্থীর শিট প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি, এসএসসির গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের হয় মামলা।এদিকে এই গ্রুপ ডি ওএমআর শিট কারচুপি সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত করছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, ওএমআর শিট কারচুপির কথা। সিবিআই গোয়েন্দারা গাজিয়াবাদ থেকে ওএমআর শিটগুলি উদ্ধার করে।সিবিআই যে ওএমআর শিটগুলি দিয়েছে, সেই সবগুলি পরীক্ষা করে স্কুল সার্ভিস কমিশন।

সেখানে ওএমআর শিট বিকৃত করার বিষয়টি আদালতে জানায় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এরপর গত ২৪ জানুয়ারি এসএসসিকে ৪৪৮৭ জন গ্রুপ ডি কর্মী , পাশাপাশি ওয়েটিং লিস্টের প্রার্থীদের ওএমআর শিট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ দেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − 6 =