কলকাতা: যৌন অভিপ্রায় নিয়ে কোনও শিশুর যোনি, লিঙ্গ, নিতম্ব, বুক স্পর্শ করলে বা তাকে দিয়ে স্পর্শ করালে তা যৌন হেনস্থা বলেই বিবেচিত হবে। পকসো আইনের ৭ নম্বর ধারা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এমনটাই জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যে একের পর এক নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১৭ সালের একটি মামালার শুনানি চলাকালীন শুক্রবার এমনটাই জানায় হাইকোর্ট। ৩১ মে একটি নাবালিকার যৌন হেনস্থার মামলা দায়ের হয়েছিল। মেয়েটির মায়ের অভিযোগ ছিল, বাড়িতে তাঁদের অনুপস্থিতিতে রোহিল পাল ঢোকে। তাঁর ১৩ বছরের মেয়ে তখন বাড়িতে খেলা করছিল। হঠাৎই রোহিত তার হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে যায়। তাকে চুমু খায়, তার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করে। যৌন হেনস্থা করে। এতে মেয়েটি যখন বাধা দেয় এবং রোহিতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে, তখন রোহিত পালিয়ে যায়। এই মামলায় নিম্ন আদালত রোহিত পাল নামে অভিযুক্তকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৮/৩৫৪ ধারায় ও পকসো আইনের ৮ নম্বর ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। শুক্রবার শুনানির পর কলকাতা হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের নির্দেশই বহাল রাখে।
কলকাতা হাইকোর্ট এদিন বলে, কোনও নাবালিকার স্তন বিকশিত না হলেও, যৌন উদ্দেশ্য নিয়ে তার বুক স্পর্শ করলে পকসো আইনের ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী ওই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়। শুনানি চলাকালীন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, মেডিক্যাল অফিসার জানিয়েছেন ওই নাবালিকার স্তন বিকশিত হয়নি। সুতরাং যৌন উদ্দেশে তা স্পর্শ করার প্রশ্নই ওঠে না। আইনজীবীর দাবি খারিজ করে দেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরী। বিচারপতি জানিয়ে দেন, ১৩ বছরের নাবালিকার স্তনঠিকমতো বিকশিত হয়েছে কিনা প্রাসঙ্গিক নয়, অভিযুক্ত যৌন উদ্দেশ্য নিয়ে তার বুক স্পর্শ করেছে কিনা সেটাই দেখা দরকার। আর তা যদি হয়ে থাকে তা হলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়।
আদালত আরও যা জানিয়েছে তা তাৎপর্যপূর্ণ। বলা হয়েছে, অভিযুক্তর যৌন অভিপ্রায়ে যে কাজটি করেছে তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ নাও থাকতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর অভিযোগ, অভিজ্ঞতা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিই তার অভিপ্রায় বোঝার পক্ষে যথেষ্ট। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোক কোনও আত্মীয়তা বা সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও কেন মেয়েটির অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে তার বাড়িতে ঢুকবে। তার পর তাকে ঘরে টেনে নিয়ে চুমু খাবে বা তার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করবে? এতেই বোঝা যাচ্ছে, অভিযুক্তর যৌন অভিপ্রায় ছিল।