গিলে ফেলা বোতাম, কয়েন বের করতে যন্ত্র তৈরি করলেন কলকাতার চিকিৎসক

কলকাতা: খেলতে গিয়ে কয়েন, বোতাম, ফলের বীজ, ছোটখাটো জিনিস অনেক সময় মুখে পুরে দেয় শিশুরা।তা বের করতে গিয়ে হয় বিপত্তি। অনেক সময় চিকিৎসকদের কাছেও পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।

বছর ছয়েক আগে এসএসকেএম হাসপাতালে এমনই একটি অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন চিকিৎসক সুদীপ দাস। সেখান থেকেই  সমাধানের পথ ভাবতে গিয়ে সহজেই এবং অল্প সময়ের মধ্যে শরীর থেকে বাইরে থেকে চলে যাওয়া বস্তুটি বের করে আনতে একটি যন্ত্র তৈরি করে ফেললেন ডাক্তার সুদীপ দাস।সম্প্রতি তার পেটেন্টও পেয়ে গিয়েছেন তিনি। ওই চিকিৎসক জানান, এই যন্ত্রটির পোশাকি নাম ‘এসোফেজিয়াল স্মুথ স্লিপারি ফরেন বডি পুলার’। তবে কিছু দিন পর খোলা বাজারে এটি চলে এলে তখন সহজ এবং ছোট কোনও নাম দেওয়ারও পরকল্পনা রয়েছে সুদীপের। শরীর থেকে ‘ফরেন বডি’ বার করার যন্ত্রটি দেখতে অনেকটা চামচের মতো। গোড়ার দিকে অংশটি অনেকটা আঁকশির মতো কাজ করবে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক।

চিকিৎসক জানান, এই যন্ত্রের নকশা তৈরি করেন তিনি। বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাহায্য নিয়েছিলেন। তার পর স্টেনলেস স্টিল দিয়ে যন্ত্রটি তৈরি করার জন্য তিনি সাহায্য নেন একটি বেসরকারি সংস্থারও। বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে অবশেষে গত ৩১ জানুয়ারি পেটেন্টের অনুমোদন হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সুদীপ দাস। এ বার বাজারে আসার অপেক্ষা।

শিশুরা খেলতে গিয়ে অনেক কিছু গিলে ফেলে। বা নাকেও তেঁতুলের বীজ, বোতাম এরকম ছোটখাটো জিনিস ঢুকিয়ে ফেলে।  বাচ্চাকে স্বস্তি দিতে প্রথমেই খাদ্যনালীতে আটকে থাকা বস্তুকে চিকিৎসকেরা ঠেলে পেটে পাঠিয়ে দেন, যাতে পরে মলত্যাগের সময় তা বেরিয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারেরও দরকার পরে। অনেক সময় ট্র্যাকিয়া বা শ্বাসনালীতে খাবার আটকে তা প্রাণঘাতী পর্যন্ত হয়।

তবে এ বার সমস্যার সমাধান তুলনায় সহজ হবে বলেই আশাবাদী কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার সুদীপ দাস।

তিনি জানান, ‘‘এই যন্ত্রটি মুখ দিয়ে রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হবে। লম্বায় ৪৫ সেন্টিমিটারের যন্ত্রটির মাথার দিকে চামচ বা আঁকশির মতো অংশটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পর মাথার ৮ মিলিমিটার বাই ৬ মিলিমিটার অংশটি ৯০ ডিগ্রি করে বাঁকিয়ে দেওয়া যাবে। তাতে শরীরের ভিতর যে বস্তু আটকে আছে, তাকে আঁকশির মতে আটকে ধীরে ধীরে টেনে বার করে নেওয়া যাবে।’’

ইতিমধ্যেই ১৩-১৪টি শিশুর শরীর থেকে ‘ফরেন বডি’ এই যন্ত্র ব্যবহার করে সহজে বের করা গিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × two =