বিচিত্র কাজকর্মে সিএবি’র সমাজ মাধ্যম থাকা আর না থাকার সমান

রোহিত টেস্ট থেকে অবসর নেন ইডেনে কলকাতা-চেন্নাই ম্যাচের দিন। সেই খবর ও সিএবির তরফে ধোনিকে সংবর্ধনার ছবি সিএবির ফেসবুকে পোস্ট হয় পরদিন।

একের পর এক ভুল, তবু নিশ্চুপ সিএবি

অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়

কাকে দিয়েছে রাজার পাঠ! না হোমে না যজ্ঞে! তবু তিনি প্রশ্রয় পাচ্ছেন। গোটা দেশ তোলপাড় ভারত-পাক সংঘর্ষে। যেভাবে অপারেশন সিঁদুর ও পরেরদিন থেকে পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনারা, তাতে দেশের সকলেই বাহবা জানিয়েছে সেনাদের। জানিয়েছে কুর্নিশ। ইডেনেই সিএসকে বনাম কেকেআর ম্যাচ শুরুর আগে সেনাদের কুর্নিশ জানিয়ে আইপিএল কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের জন্য বাজানো হয়েছিল জাতীয় সঙ্গীত। যেখানে গলা মিলিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি থেকে অজিঙ্কা রাহানে।শুধু তাই নয়, এরপর ধরমশালায় দিল্লি বনাম পাঞ্জাব ম্যাচেও সেনাদের কুর্নিশ জানিয়ে ধরমশালায় পারফর্ম হয়। যদিও খেলা মাঝপথে বন্ধ করতে হয়।ক্রিকেটার থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি, বিসিসিআই কেউ বাদ নেই। বাদ শুধু সিএবি। শনিবার রাতে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পর্যন্ত সোশাল মিডিয়ায় কিচ্ছুটি নেই। কেন? এরপর সেই সংঘর্ষ বিরতিও হয়ে গেল দু’দেশের। সময় বের করতে পারেননি মিডিয়া ম্যানেজার। পারবেন কীভাবে। সেই যে ঋদ্ধিমান সাহা অবসর নিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর কভার ফটো করা হয়েছিল। ১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে কত জল বয়ে গেছে গঙ্গা দিয়ে। বাংলার ক্রিকেট যেন থমকে গেছে। আর কোনও কভার ফটো জোগাড় করতে পারেননি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ এক কর্তা বলেন, ‘টাকা কি তাঁর থমকে গেছে?’ কারণ অযোগ্য লোক মিডিয়া ম্যানেজার সেজে চেয়ারে বসে। তাই চলছে বিচিত্র কার্যকলাপ ও সাকার্স।

শুধু তাই নয়, রোহিত শর্মা যাঁর কলকাতাতেই টেস্ট অভিষেক, কলকাতাতেই আইপিএল ও টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরি, ওডিআই ম্যাচে ২৬৪ রান, তিনি টেস্টে অবসর নেওয়ার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর সিএবি আপডেট দিয়েছে। তাও আবার সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ও প্রাক্তন ক্রিকেটার ও স্কুল সাব কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় দাসের হস্তক্ষেপে। ইডেনে খেলতে এলে সিএবি কর্তারা বিশেষ স্মারক দিয়ে সম্মানিত করে এমএস ধোনিকে। তাতে ধোনিকে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করতে দেখা যায়। সিএবি সভাপিত স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, সচিব নরেশ ওঝা ছাড়াও ছিলেন জয়দীপ মুখার্জী, স্বয়ং সিইও। আবার মাঠ কর্মীদের উৎসাহিত করতে তাদের সঙ্গে ছবিও তোলেন সকলের প্রিয় এমএসডি।সূত্রের খবর, সেই ছবি তুলে ইডেন গার্ডেন্সের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অথচ কেউ কিছুই জানতে পারে না মিডিয়া ম্যানেজারের অকর্মন্যতাতেই। ম্যাচের পরদিন সিএবির অফিসিয়াল পেজে আপলোড করা হয়েছে সেই ছবি। ফলে কেউই সে ছবি ছাপাতে পারেনি সংবাদপত্রে। কেন তবু তাঁকে বয়ে বেড়ানো! শেষ এখানেও নয়, ১৫ আগস্ট গ্রাফিক্সে উল্টো পতাকার ছবি আপলোড করে সিএবিকে চরম লজ্জায় ফেলেন এই গুণধরই। সে ছবি আজও ডিলিট করার সময় পাননি। সিএবির এক কর্তা, যিনি আবার পেশায় আইনজীবী তিনি বলেন, এটা হচ্ছে জাতীয় পতাকার অবমাননা।সিএবির মতো কুলীন, এলিট সংস্থায় এটা কাম্য নয়। আবার অম্বর রায় টুর্নামেন্টে বাছাই করা ছবি দিতে গিয়ে সিএবির একাধিক কর্তাকেই বাদ দিয়ে দেন। সিএবির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়, সাবোতাজ করতেই এই কুকীর্তি তাঁর। সেই সাবোটেজের ইতিহাসও প্রথম নয়। পুরোটা জানালে মীরজাফরও লজ্জা পাবে। ঘরোয়া ক্রিকেট যে হয় তারও কোনও স্কোর ভুলেও আপলোড হয় না। ফলে প্রচারও পায় না ক্লাব ক্রিকেট। সিভিক স্টাফের অযোগ্যতাতেই ডুবছে মানসম্মান। তবু কেন সে বহাল? কম্পার্টমেন্টাল মিডিয়া ম্যানেজার কেন আছেন? কেউ জানে না। সিএবির এক কর্তা যিনি মোহনবাগানের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন, উত্তর কলকাতার সেই কর্তা পরিষ্কার বলেন, শুধুই লবিবাজি ও রাজনীতি করতেই থেকে যাওয়া। ডান হাত থামিয়ে বাঁ হাতে ভিটামিন এম নিয়ে পেটোয়া সাংবাদিকদের টিকিট পাইয়ে দিয়ে ব্ল্যাক করতে ওস্তাদ। আর কর্তাদের তেলবাজি করে। সিএবিতে গুরুত্বপূর্ণ এক কমিটির চেয়ারম্যান ও সৌরভ ঘনিষ্ঠ বলেন, সিইও চিন্ময়ের সঙ্গে সূঁচ সুতোর মতো সম্পর্ক আছে, তার জন্যই হয়তো এতবড় অপদার্থতার পরেও ওঁকে পদে রেখে দেওয়া হয়েছে। সভাপতিকে সব জানানো হয় না। এর আগেও এই অপদার্থ মিডিয়া ম্যানেজারের কুকীর্তি সামনে আসায় সিইওকে তদন্ত করতে দিয়েছিলেন সিএবি সভাপতি। কিন্তু সে’সময় সিইও ভিনরাজ্যে কাজের সূত্রে চলে যাওয়ায় তদন্ত ঠান্ডা ঘরেই চলে যায়। এর আগে কার্পেডিয়াম কমিউনিকেশন বলে বেসরকারি সংস্থা করত, তখনও পেশাদার কাজ দেখা যেত। স্নেহাশিস ও সঞ্জয় সদর্থক ভূমিকা দেখা গেলেও হাল বদলাচ্ছে না সিএবির। আর এক সিএবির কর্মচারী জানান, এই মীরজাফর, এই কালিদাসের ইতিহাস জানলেই তো বোঝা যায়। এর আগে ডেপুটি হিসেবে কাজ করত। চা জল আনত। তাকে দিয়েছে রাজার পাঠ! এক কর্তা বলেন, বিচিত্র কার্যকলাপ চলছে।

এবারের এজিএমে হাটে হাঁড়ি ভাঙবই। আশা করি, নিশ্চয়ই সিএবি সভাপতি কিছু একটা ব্যবস্থা নেবেন। আসলে শিব ঠাকুরের আপন দেশে, আইনকানুন সর্বনেশে। বিচিত্র অবশ্য কারোর কোনও কথার পরোয়া করেন না। তাঁর কাজই মিডিয়ায় আপডেট দেওয়া নয়, মিডিয়ার কথা জানিয়ে সিএবি সভাপতির কান ভাঙানো ও ভুল বুঝিয়ে সিএবিকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা।সূত্রের খবর, সিএবি সভাপতিও বারবার অভিযোগ পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঘনিষ্টমহলে। তিনিও কিছু একটা ব্যবস্থা করবেনই।নাকি সব জেনে বুঝেও কি চুপ থাকবেন সিএবি সভাপতি? কী ব্যবস্থা নেয় তার দিকে তাকিয়ে মিডিয়া থেকে অনুমোদিত ক্লাব কর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − four =