বিটিএ-ডিকেএসের বিশেষ আয়োজন, কলকাতায় টেনিস কিংবদন্তি লিয়েন্ডার পেজকে সংবর্ধনা

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় টেনিসকে বিশ্ব দরবারে গর্বের আসনে পৌঁছে দেওয়া লিজেন্ড লিয়েন্ডার এড্রিয়ান পেসকে ঘিরে আয়োজিত হচ্ছে মহা সংবর্ধনার অনুষ্ঠান। বেঙ্গল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং দক্ষিণ কলকাতা সংসদ (ডিকেএস)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানটির নাম— “A Grand Slam Salute to the Legend: Leander Paes”। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বাস্তবায়িত হচ্ছে এই আয়োজন। বিটিএ প্রেসিডেন্ট হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র লিয়েন্ডার। তাঁর অসাধারণ ক্যারিয়ার ও অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই সংবর্ধনা।”

অনুষ্ঠানের শুরুতেই কলকাতা শহরের এক বিশেষ মন্টাজ প্রদর্শিত হচ্ছে এভি কাউন্টডাউনের মাধ্যমে। সঞ্চালকের দায়িত্বে রয়েছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য। তিনি প্রথমেই এই আয়োজনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। প্রয়াত ড. ভেস পেসকে স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা। এরপর কবি সুবোধ সরকার ও রায়া ভট্টাচার্য আবৃত্তি করেন বিশেষ কবিতা। প্রদর্শিত হয় অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন, যেখানে উঠে আসে লিয়েন্ডারের টেনিসজীবনের যাত্রাপথ ও মাইলফলক অর্জন। সংবর্ধনার বিশেষ আকর্ষণ হলো ৫০ জন টেনিস প্রশিক্ষণার্থীর হাত ধরে ‘গার্ড অফ অনার’-এর মাধ্যমে লিয়েন্ডারের প্রবেশ। এরপর প্রধান অতিথি অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, দেবাশিস কুমার, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় তাঁকে শুভেচ্ছা জানান।

অতিথিদের বক্তব্য শেষে লিয়েন্ডারও ভাষণ দেন এবং তাঁকে বিশেষভাবে সংবর্ধিত করা হয়। এরপর গৌতম ভট্টাচার্য ও অপরূপা সরকার পরিচালিত ইন্টার‌্যাকশন সেশনে তিনি খোলামেলা আড্ডায় ভাগ করে নেন তাঁর অভিজ্ঞতা। লিয়েন্ডার পেস বলেন, “আজকের এই সংবর্ধনা আমার জীবনের অন্যতম বিশেষ মুহূর্ত। টেনিস আমাকে শুধু কোর্টে জয় দেয়নি, দিয়েছে জীবনের শিক্ষা, শৃঙ্খলা এবং মানুষের ভালোবাসা। কলকাতা শহর আমার জন্মভূমি, এখানকার মানুষ সবসময় আমার শক্তি হয়ে থেকেছে। আমি বিশ্বাস করি, খেলাধুলা শুধু পদক জেতার জন্য নয়, বরং নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার একটি মাধ্যম। আগামী দিনে আমার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আমি তরুণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। এই সম্মান আমাকে আরও দায়বদ্ধ করেছে। ভারতীয় পতাকা বিশ্বের মাটিতে উড়তে দেখা— সেটাই আমার সবচেয়ে বড় সাফল্য।” তিনিই আরো বলেন “আজকের এই মুহূর্তে আমি বিশেষভাবে সম্মান জানাই আমার মা জেনিফার পেস এবং আমার স্টেপ মাকে। তাঁদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, ত্যাগ ও নিরন্তর সহায়তাই আমাকে মানুষ করেছে, খেলোয়াড় করেছে। পরিবারের শক্তিই আমার আসল প্রেরণা, তাঁদের ছাড়া এই সাফল্য কোনোদিন সম্ভব হতো না।”

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় সঙ্গীত জগতের আইকন ঊষা উত্থুপের পরিবেশনায়। তিনি লিয়েন্ডারের কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করে বিশেষভাবে রচিত গান গেয়ে তাঁকে সম্মান জানান।বেঙ্গল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, এই সংবর্ধনা শুধু একজন খেলোয়াড়কে সম্মান নয়, বরং গোটা জাতিকে অনুপ্রাণিত করার এক অনন্য প্রয়াস। ভারতীয় ক্রীড়ার এই উজ্জ্বল নায়ককে ঘিরে আয়োজন নিঃসন্দেহে বাঙালির ক্রীড়া ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + six =