ভঙ্গ ৩৫৮ কোটির চুক্তি ! এশিয়া কাপে স্পনসরহীন ভারতীয় দল

ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান স্পনসর ড্রিম ১১ শীঘ্রই তাদের পদ থেকে সরে যাচ্ছে। এর মূল কারণ সম্প্রতি বাদল অধিবেশনে পাশ হওয়া ‘দ্য প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব অনলাইন গেমিং বিল’, যেখানে বলা হয়েছে রিয়াল মানি নির্ভর ফ্যান্টাসি গেমিং অ্যাপগুলির উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। অর্থাৎ, ড্রিম ১১ বা মাই ১১ সার্কেলের মতো অ্যাপগুলিতে ব্যবহারকারীরা যেভাবে টাকা বিনিয়োগ বা আয় করতেন, সেটি আর সম্ভব হবে না। নতুন আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, কোনও অস্বীকৃত অনলাইন অ্যাপে টাকা জমা বা তোলা যাবে না এবং ব্যাংকের মাধ্যমে এই ধরনের লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। এর ফলে রিয়াল মানি নির্ভর এই অ্যাপগুলির ব্যবসায় সরাসরি আঘাত লাগবে।

ড্রিম ১১ গত তিন বছরে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সঙ্গে প্রায় ৩৫৮ কোটি টাকার চুক্তি করে প্রধান স্পনসর হয়েছিল। শুধু পুরুষ ক্রিকেট দল নয়, মহিলা দল এবং অনূর্ধ্ব ১৯ দলের জার্সিতেও এই সংস্থার লোগো ব্যবহার হয়ে এসেছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত স্পনসর থাকার কথা ছিল ড্রিম ১১-এর। কিন্তু নতুন আইনের কারণে কোম্পানির মূল ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা স্পনসর পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সাধারণভাবে দেখা যায়, কোনও প্রতিষ্ঠান চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরে গেলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। কিন্তু ড্রিম ১১-এর ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা। বিসিসিআইয়ের সঙ্গে তাদের যে চুক্তি হয়েছে, সেখানে স্পষ্ট একটি শর্ত রাখা হয়েছিল। সেই শর্ত অনুযায়ী, যদি কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও নতুন আইন বা বিধিনিষেধের কারণে কোম্পানির মূল ব্যবসায় সমস্যা হয়, তবে তারা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে না। ফলে ড্রিম ১১ কোনওরকম জরিমানা ছাড়াই এই চুক্তি ভঙ্গ করছে।

বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, ড্রিম ১১-এর এক কর্তা ইতিমধ্যেই বিসিসিআইয়ের সিইও হেমাঙ্গ আমিনকে জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা আর প্রধান স্পনসর থাকতে পারবে না। এর ফলে আগামী এশিয়া কাপেই ভারতীয় দলের জার্সিতে হয়তো কোনও স্পনসরের নাম দেখা যাবে না। এমন পরিস্থিতি সামলাতে বিসিসিআই দ্রুত নতুন টেন্ডার ডেকে অন্য কোনও সংস্থাকে প্রধান স্পনসর করার চেষ্টা করবে।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, দেশের আইনি কাঠামো ও ব্যবসায়িক চুক্তির মধ্যে কেমন নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। একদিকে ফ্যান্টাসি স্পোর্টসের মতো একটি জনপ্রিয় ক্ষেত্র নতুন আইনের কারণে কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া সংস্থা হঠাৎ প্রধান স্পনসর হারাচ্ছে। তবে বিসিসিআইয়ের ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং ভারতীয় ক্রিকেটের বিপুল জনপ্রিয়তা বিবেচনা করলে মনে করা হচ্ছে, নতুন কোনও বড় কোম্পানি খুব দ্রুতই স্পনসর হতে এগিয়ে আসবে।

সারকথা, সরকারের নতুন অনলাইন গেমিং বিলের ফলে ড্রিম ১১ বাধ্য হয়ে ভারতীয় দলের স্পনসরশিপ থেকে সরে যাচ্ছে। তবে বিশেষ চুক্তির শর্ত থাকার কারণে কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে না। অদূর ভবিষ্যতে নতুন স্পনসর খুঁজে পাওয়া বিসিসিআইয়ের কাছে সময়সাপেক্ষ হলেও খুব কঠিন হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 3 =