হুগলি: এক-একটা মিনিট যেন মনে হচ্ছে, এক এক ঘণ্টা। চোখ শুধু টিভির পর্দায়। ১৪ দিন ধরে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছে সৌভিক পাখিরা ও জয়দেব পরামানিকের পরিবার। কখনও মনে জাগছে আশা, আবার কখনও প্রবল হতাশায় মনে হচ্ছে এই বুঝি সব শেষ। উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ে আটকে পড়া হুগলির পুড়শুরার সৌভিক, জয়দেবের বাড়ির লোকেরা এখন উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছেন। ঈশ্বরের কাছে তাঁদের একটাই প্রার্থনা, ঘরের ছেলেরা নির্বিঘ্নে ফিরে আসুক।
উত্তরকাশীর সিল্কিরায়া সুড়ঙ্গে ধস নেমে আটকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের ৪১ জন শ্রমিক। ১৪ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। উদ্ধারের সমস্ত পথই কঠিন হয়ে পড়ছে। কখনও এই যন্ত্র, কখনও ওই যন্ত্র এনে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। গোটা দেশের চোখ সেদিকেই।
পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙেছে। আমেরিকার উন্নতমানের খনন যন্ত্রও শেষ মুহূর্তে খারাপ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের লোকজনের গত দু’দিনের আশা, হতাশায় পরিণত হয়েছে। একটু জেনেই তাঁরা শান্ত আছেন, এখনও কোনও খারাপ খবর নেই। ৪১ জনই সুড়ঙ্গ গহ´রে সুস্থ আছেন।
হরিণাখালির গ্রামের মান্না পাড়ায় সৌভিক পাখিরার বাড়ি ঘিরে শনিবারও ছিল পড়শিদের জটলা। প্রতিদিনই পাড়ার লোকজন খোঁজ খবর করছেন। সৌভিকের মা লক্ষ্মী পাখিরা এদিন বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ছেলের ভয়েস রেকর্ড পাঠানো হয়েছিল। আমাদের চিন্তা করতে বারণ করেছে। দ্রুত উদ্ধার হবার কথাও বলেছিল। কিন্ত যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে উদ্ধারের কাজ থমকে যাবার খবর পেয়ে আবার উৎকন্ঠা বাড়ছে। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।’
মান্না পাড়ার বাসিন্দা পিঙ্কি মাজি বলেন, ‘আমরাও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি। উদ্ধারের কাজে বিলম্ব হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি ঘরের ছেলে সুস্থভাবে বাড়ি ফিরে আসুক।’ অপর বাসিন্দা বেচারাম মান্না বলেন, ‘আমার ছেলে সুরজিৎ মান্না উত্তর কাশীর সুড়ঙ্গ নির্মাণ কাজে যুক্ত রয়েছে। সৌভিক দুর্গা পুজোর সময় ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিল। লক্ষ্মীপুজোর পর ফিরে যায়। আমার ছেলেকে কালী পুজোর সময় ছুটি দেওয়া হয়েছিল। দুর্ঘটনার আগের দিন বাড়িতে আসে। অফিসারদের নির্দেশ মতো বুধবার ফিরে গিয়েছে। এদিন সকালে ছেলে ফোন করে জানায় যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার কাজ আবার থমকে গিয়েছে। শ্রমিকরা সুড়ঙ্গের ভিতর হাতে করে পাথর সরাচ্ছেন।’
নিমডাঙ্গি গ্রামের জয়দেব পরামানিকের বাড়ির চিত্র একইরমক। প্রতিবেশীরা এসে প্রতিদিন খবর নিচ্ছেন। বাবা তাপস পরামানিক বলেন, ‘ছেলের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছি। আমার স্ত্রী ঘটনার পর থেকে শয্যাসায়ী । প্রতিবেশীরা এসে খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। সেই খাবার মুখে দেবার মতো অবস্থা আমাদের নেই। উদ্ধারের কাজ বার বার থমকে যাওয়ায় উৎকন্ঠা বাড়ছে।’ স্থানীয় বাসিন্দা মৌসুমী গুছাইত বলেন, ‘জয়দেবের মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় মহিলারা সবসময় পাশে থাকছেন। ছেলেটা সুস্থভাবে বাড়ি ফিরে আসুক এটাই চাইছি।’