নৌকো মানেই খানাকুলের মানুষের কাছে একটা আবেগের জলযান ও অপরিহার্য মাধ্যম

মহেশ্বর চক্রবর্তী

হুগলির আরামবাগ মহকুমার মধ্যে সবচেয়ে বন্যাপ্রবণ এলাকা হল খানাকুল। বর্ষাকালে বৃষ্টি জল বেশি হলেই চিন্তার ভাঁজ পড়ে খানাকুলবাসীর। স্থলপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই তারা বহু প্রাচীনকাল থেকেই জলপথ ব্যবহারের জন্য নৌকোকেই একমাত্র নির্ভরযোগ্য যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে। আসলে নৌকো মানেই খানাকুলের মানুষের কাছে একটা আবেগের জল যান। আষাঢ় ও শ্রাবণ বর্ষাকাল হলেও যে বছর বর্ষার চাপ বেশি থাকে তাদের চার মাস প্রায় নৌকো করে যাতায়াত করতে হয় খানাকুলের বেশ কয়েক অঞ্চলের মানুষকে। খানাকুলের জগৎপুর, নতিবপুর, চিংড়ি,গণেশপুর, তাঁতিশাল, শাবলসিংহপুর, মাড়োখানা, বন্দরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষকে বর্ষাকালে যাতায়াত করার জন্য নৌকো ব্যবহার করতে দেখা যায়। প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরেই নৌকো কিংবা কাঠের ছোট ডিংঙা রয়েছে। ছেলে মেয়েদের স্কুল যাওয়া থেকে শুরু করে বাজার করা, হাসপাতাল যাওয়া, বিবাহ ও শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যাওয়া সব কিছুই নৌকো করে করতে হয়। এমনকী, যে বছর বন্যা হয় সেই বছর কেউ মারা গেলে সৎকার্য করার জায়গা থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে নৌকো করে মরদেহ নিয়ে গিয়ে দূরে কোথাও ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও আছে। তাই খানাকুলের ওই সমস্ত বন্যা প্রবণ অঞ্চলগুলির মানুষের সঙ্গে নৌকো ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। আঞ্চলিক স্তরে প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা গিয়েছে, তৎকালীন সময়ে নৌকো এতটাই প্রয়োজনীয় ছিল যে খানাকুলের বন্যাপ্রবণ এলাকার মানুষ বর পণ হিসাবে নৌকো নিতেন। ছেলে পক্ষ সেই নৌকো করেই বিবাহ করতে যেতেন এবং নৌকোতেই বিবাহ করে বাড়িতে নতুন বউ নিয়ে আসতেন। তবে সেই রীতি এখন না থাকলেও প্রায় প্রতি ঘরে নৌকো রয়েছে। বিপদের সময় আমরা যেমন অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করি তেমনি ওরা নৌকো ব্যবহার করেন। এই বিষয়ে খানাকুলের একজন বাসিন্দা জানান, খানাকুলের দুটি ব্লকেই নৌকোর গুরুত্ব রয়েছে। খানাকুল দুই থেকে তিনটি নদী দিয়ে ঘেরা। তাই বর্ষার সময় নৌকো খুব প্রয়োজন। বাকি সময়েও আমরা স্থলপথের থেকে জলপথ বেশি ব্যবহার করি কারণ বন্যার জন্য রাস্তা ভালো থাকে না। চার চাকার সব গাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে প্রবেশ করতে পারে না। তাই নৌকো করেই যাতায়াত করতে হয়। ৫০ -৬০ বছরে আগে নৌকোকে বাণিজ্যিক কারণেও ব্যবহার করা হত। অপরদিকে বিশিষ্ট শিক্ষক নিমাইবাবু বলেন, খানাকুলের একান্ত অপরিহার্য যানবাহন হল নৌকো। খানাকুল প্রায় তিনমাস ধরে বন্যায় ভেসে থাকে। এখন রাস্তা হলেও বর্ষার সময় নৌকো করেই যেতে হয় বলে জানান তিনি। সবমিলিয়ে খানাকুলের বন্যা প্রবণ এলাকার মানুষের কাছে নৌকো, জীবন যাপনের অন্যতম অঙ্গ হিসাবে গণ্য করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 2 =