বিজেপির সঙ্গে একইসাথে নাম উচ্চারিত হয় সঙ্ঘেরও। কারণ, এই দুইয়ের সম্পর্ক ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত। ভারতীয় রাজনীতিতে এই ঘটনা কারও অজানাও নয়। কারণ, বিজেপি এবং আরএসএস-এর সমন্বয়েই নেওয়া হয় সমগ্র সিদ্ধান্ত। দু’পক্ষের মধ্যে এমন সমন্বয়ের বিষয়টি বিভিন্ন কর্মকাণ্ড থেকে জানা বা বোঝা গেলেও আরএসএস বা বিজেপি কোনও তরফের থেকেই এই তথাকথিত ‘ওপেন সিক্রেট’টি আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকার করে না। সঙ্ঘের দাবি, তারা সামাজিক সংগঠন, আদর্শ নাগরিক গড়াই তাদের লক্ষ্য। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই। এদিকে আবার বিজেপি মানতে নারাজ যে তাঁদের সুতো নাগপুরের আরএসএস-এর দপ্তরে বাঁধা।
এমনকী বিজেপি এবং আরএসএস-এর মধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে মাস তিনেক অন্তর যে সমন্বয় বৈঠক হয় তার কথাও আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয় না।
এদিকে এবার এই তথ্যই ফাঁস হয়ে গেল বঙ্গ বিজেপির এক লিফলেটে। ২০২৩-এই পঞ্চায়েত নির্বাচন বঙ্গে। আর এই নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের অবস্থা ঠিক কোথায় তা বুঝতে ঝাঁপিয়েছেন বিজেপি। গড়ে তোলা হচ্ছে বুথস্তরে সংগঠন শক্তিশালী করার কাজ।
বুথে বুথে পার্টির ভিত শক্তপোক্ত করতে গেলে কী কী করণীয়, তার দীর্ঘ তালিকা রাজ্য বিজেপির তরফে লিফলেট আকারে ছাপিয়ে বিলি করা হয়েছে দলের প্রতিটি জেলা এবং মণ্ডল কমিটিতে। আর এই লিফলেটেই নজরে আসছে, সেখানে এক জায়গায় লেখা, ‘প্রতিটি বুথে বসবাসকারী সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’ কর্মীদের উদ্দেশে বিজেপি নেতৃত্বের আপাত নিরীহ এই নির্দেশকে কেন্দ্র করেই গেরুয়া শিবিরে জল ঘোলা হতে শুরু করেছে বলে সূত্রে খবর। এখানে বিজেপি নেতাদের একাংশ এ প্রশ্নও তুলেছেন, এর মধ্যে বিতর্কের কিছুই নেই। বিজেপি তো সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যদের বাড়িতেই যাবে। তৃণমূলের ঘরে যাওয়ার কথা নয়! কিন্তু দলেরই বর্ষীয়ান নেতাদের অনেকের অভিমত, সব কিছু ঢাকঢোল পিটিয়ে জানাতে নেই। সবটা মানুষের চোখের সামনে থাকলেও, মানুষ বুঝলেও কিছু কাজে আড়াল ও সে ব্যাপারে নীরবতা থাকাই শ্রেয়। এই প্রসঙ্গে বিজেপির এক প্রবীণ নেতা এও জানান, ‘এতদিন এটাই ছিল আরএসএস-এর সঙ্গে বিজেপির অলিখিত চুক্তি যে, প্রকাশ্যে কেউ একে অন্যকে সহযোগিতার কথা স্বীকার করবে না। কিন্তু দলীয় লিফলেটে আরএসএস-এর কথা উল্লেখ করে সেই চুক্তি লঙ্ঘনই করা হলো।’
এদিকে সূত্রে খবর, বঙ্গ বিজেপির এই লিফলেটের কথা জানতে পেরে ক্ষুব্ধ সঙ্ঘ, এমনটাই সূত্রের খবর। সঙ্ঘের এক শীর্ষনেতা এ প্রসঙ্গে এও জানান, ‘এটা না-হলেই ভালো হতো। এটা কাম্য ছিল না। বিজেপির দলীয় নির্দেশিকায় সঙ্ঘের কথা উল্লেখ করা হলে সেটা ঠিক হয়নি।’ বিড়ম্বনা এড়াতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের তরফ থেকে এও জানানো হয়, ‘আমাদের অনেক স্বয়ংসেবক বিজেপিতে আছেন। এই টুকুই। এর থেকে বেশি কিছু নয়। আমার সামাজিক সংগঠন। আমাদের কাজ মানুষের সেবা করা। রাজনীতিতে আমরা নেই। তবে শুধু বিজেপি কেন, মানুষের সেবাকাজের জন্য যে কোনও রাজনৈতিক দলই আরএসএসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।’