খারুই: ফের ডাহা ফেল ‘নন্দকুমার মডেল’। তৃণমূলকে হারাতে নন্দকুমার যে মডেলে জোট বেঁধেছিল বিরোধীরা তা কাজে এল না তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের খারুই গঠরাতে সমবায় সমিতির নির্বাচনে। নির্বাচনী ফল বের হওয়ার পর হাসি জোড়াফুল শিবিরে। মুখ থুবড়ে পড়ল ‘রাম-বাম’ জোট। রবিবার এই সমবায় নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, ৪৩ আসনের খারুই সমবায়ে ৩৯টিতে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। ৪টিতে জয়ী হয়েছে জোট প্রার্থীরা। এমন ছবি দেখা গিয়েছিল মহিষাদলের সমবায় সমিতির নির্বাচনেও। সেখানে তৃণমূলকে হারাতে জোট বেঁধে লড়ে বাম-বিজেপি। তবে শেষ হাসি হাসে তৃণমূলই। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সমবায় নির্বাচনে এই লাগাতার জয়ে তৃণমূল কর্মীরা নতুন করে অক্সিজেন পাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।
এখানে একটা কথা বলতেই হয়, খারুই গঠরাতে বিজেপির সঙ্গে জোটের খবর সামনে আসার পর কড়া অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছিল জেলা সিপিএম নেতৃত্বকে। সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১৯১৩ ধারা অনুযায়ী জোটে সামিল দলীয় সদস্যদের বহিষ্কারও করা হয়। এদিকে ৬ জন তৃণমূল কর্মীকেও বহিষ্কার করা হয়। এতো কিছুর পরও বিজেপিকে সঙ্গে নিয়েই ভোটে লড়েন ‘বাম’ প্রার্থীরা। ৪৩ টি আসনের মধ্যে ২৭ টি আসনে লড়ে বিজেপি। ১৬ টি আসনে লড়ছে সিপিএম।
এদিকে রবিবার এই সমবায় সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয় বিজেপি শিবির থেকে। এদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তোলে তৃণমূল। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে তা নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জও করতে হয় পুলিশকে। এ ঘটনায় বিজেপির এক কর্মী আহতও হন বলে সূত্রে খবর।
এদিনের এই জয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারনা, নন্দকুমারে জয়ের থেকে শাসক দলকে রুখতে বাম-বিজেপি জোটের সমীকরণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। রাজনৈতিক ময়দানে লড়াইয়ের বিকল্প পথ খুলে গিয়েছিল বলে মনে করা হয়। কিন্তু মহিষাদল এবং খারুই গঠরায় তৃণমূল সক্রিয় হতেই এই জোট সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকী মহিষাদলে জোটে দূরত্ব বজায় রাখে সিপিআইএম। বিজেপির সঙ্গে জোটে ছিল শুধুমাত্র সিপিআই। খারুইয়েও সেই একই দৃশ্য। জোটে নীচুতলার সিপিএম কর্মীরা এগিয়ে এলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব ছিল নিচু তলার কর্মীদের মধ্যে।
এই প্রসঙ্গে সিপিএম কর্মী বাসুদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘আমাদের এখানে ৪৩টা আসন। তারমধ্যে তৃণমূল ৩৯টিতে জিতেছে। ৪টিতে বিরোধী জোট জিতেছে। আগের বছরও ভোট লুঠ হয়ে গিয়েছিল। ওরা ক্ষমতায় থাকবে বলে সমবায়ে অতিরিক্ত সদস্যপদ তৈরি করে। সে কারণেই ওদের জয়ের রাস্তা সহজ হয়েছে। আমরা প্রগতিশীল জোট করে লড়েছিলাম। ভোট লুঠ রুখতে মানুষ যেটা চেয়েছিল সেটাই আমরা করেছি। বহিষ্কার নিয়ে জেলা নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’
এদিকে এই জয়ের পর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি শরৎচন্দ্র মেটা জানান, ‘বিজেপি-সিপিএম যে অশুভ আঁতাত করেছিল তাঁদের দিকে মানুষ তাকায়নি। ওরা আজ সকালেও ময়না থেকে কিছু বহিরাগত এনে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করেছিল। সেটা পুলিশ রুখে দিয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে।’ এরই পাশাপাশি তিনি এও জানান, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা এখানের সব কটা আসনে জিতব।‘