নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: নেই রাজ্যের বাসিন্দা!
বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর ব্লকের অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয় থেকে দু’- তিন কিলোমিটার দূরে একদিকে জঙ্গল অন্যদিকে কৃষি জমিতে ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম ভালুকা। এই ভালুকা গ্রামে রয়েছে ৪৫ থেকে ৫০টি পরিবারের বাস। কালো পিচের রাস্তা রয়েছে অযোধ্যাতে, সেখান থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে চারিদিকে কৃষি জমির মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে এক ফালি মোরাম রাস্তা, আর তার শেষ প্রান্তে ভালুকা গ্রাম। গ্রামে ঢোকে না কোনও চারচাকা গাড়ি, কারণ রাস্তার এতটাই বেহাল দশা। পশ্চিমবঙ্গকে শাসন করেছে কংগ্রেস, ৩৪ বছর শাসন করেছে সিপিএম, এরপর ১২ বছর অতিক্রান্ত করল তৃণমূল, কিন্তু কোনও সরকারই ভালুকা গ্রামের দিকে মুখ ফিরে তাকায়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
গ্রামের মানুষের দাবি, গ্রামে এখনও পর্যন্ত একটিও আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি হয়নি। নেই রাস্তাঘাট, যে পথ আছে, সেটাও বর্ষা এলেই এক হাঁটু জল জমে যাতায়াতের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়ে, তার ওপর গ্রামে চারচাকা গাড়ি ঢোকে না, মুমূর্ষ রোগীদের সাইকেল বা চ্যাংদোলা করে নিয়ে যেতে হয় হাসপাতালে। সঙ্গে গ্রামে রয়েছে জলের সমস্যা। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কিছুদিন আগে একটি সোলার সাবমারসেবল করে দেওয়া হয়েছে, তাতে যতক্ষণ রোদ থাকে, ততক্ষণ জল থাকে। রোদ ফুরোলেই খাবার জল শেষ হয়ে যায়। অগত্যা কুয়ো থেকে জল তুলে খেতে হয়, গ্রামে রয়েছে ট্যাপ কল, তাতে জল পড়ে না।
গ্রামের মানুষের আরও দাবি, ভোট এলে দাদা-দিদিদের দেখা মেলে, ভোট ফুরোলেই তাঁদের আর এলাকায় দেখতে পাওয়া যায় না। আর এভাবেই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ভালুকা গ্রামের মানুষজন কষ্টে-দুঃখে চিন্তায় দিন কাটিয়ে আসছে, সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হওয়া যেন তাঁদের বংশগত অধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের কাছে অবিলম্বে তাঁদের গ্রামে উন্নয়ন করা ও সমস্যার সমাধান করার দাবি জানিয়েছে ভালুক গ্রামের বাসি¨ারা।
যদিও পঞ্চায়েত ভোটের আগে ভালুকা গ্রামের উন্নয়ন নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা লেগেই আছে। তৃণমূলের দাবি, এলাকায় সমস্যা রয়েছে ঠিকই, তবে পথশ্রী প্রকল্পের মধ্য দিয়ে এলাকায় রাস্তাঘাটের জন্য ইতিমধ্যেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। ভোট পেরলেই রাস্তা হবে, এলাকার সমস্যা সমাধান হবে। গ্রামের এই দুর্দশা নিয়ে শাসকদলকে তুলোধনা করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপির দাবি, বিগত দিনেও অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধানের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি সামনে এসেছিল। বিদায়ী প্রধানের রয়েছে তিন কোটি টাকার বাড়ি। সুতরাং প্রধান যদি নিজের ঘর গোছাতে ব্যস্ত হয়, সাধারণ মানুষ কী ভাবে তার উন্নয়ন পাবেন? বিজেপি ক্ষমতায় এলে ভালুকা গ্রামে উন্নয়ন হবে বলেও দাবি করে বিজেপি।