চিরঘুমে পরিচালক তরুণ মজুমদার, শেষ ইচ্ছেয় দেহদান, থাকবে না ফুল-মালা

কলকাতা: দীর্ঘ লড়াই শেষ। সকলকে কাঁদিয়ে চিরতরে চলে গেলেন বাংলার প্রখ্যাত পরিচালক তরুণ মজুমদার। সেই তরুণ মজুমদার, যাঁর হাত ধরে সিনে প্রেমীরা পেয়েছিলেন, ‘দাদার কীর্তি’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’,  ‘আলো’-র মতো অসংখ্য  কালজয়ী ছবি। তরুণ মজুমদারের সিনেমা ছিল সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য। সেই ছবিতে কখনও তিনি দর্শককে হাসিয়েছেন, কখনও কাঁদিয়েছেন, কখনও ভাবিয়েছেন। ধরতে পেরেছেন মানুষের আবেগকে। আর তাতে অবশ্যই বারবার অন্য মাত্রা নিয়ে এসেছে তাঁর বিভিন্ন ছবিতে সফলভাবে রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রয়োগ। তাই তো দাদার কীর্তি সিনেমার কথা বললেই, বাঙালির মনে ভাসে ‘চরণ ধরিতে দিও গো আমারে’।

সোমবার সকাল ১১টা ১৭ মিনিটে এসএসকেএম-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তরুণ মজুমদার।দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। শেষের কয়েকটা দিন এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে চোখে জল কলাকুশলী থেকে সাধারণ মানুষের। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় থেকে দেবশ্রী রায় সকলেই শিক্ষক তরুণ মজুমদারকে স্মরণ করছেন। পরিচালকের হাত ধরেই নতুন নতুন তারকার জন্ম। তিনি বকে, শাসন করে, ভালবেসে হাতে ধরে অভিনয় শিখিয়েছিলেন বহু শিল্পীকে। তাঁর সিনেমার জগতে রয়েছে অসংখ্য ছবি। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে জাতীয় পুরস্কার-সহ একাধিক সম্মান।পেয়েছেন পদ্মশ্রীও। নবতীপর তরুণ মজুমদারের মৃত্যু তাই সিনেমা জগতে অপূরনীয় ক্ষতি।

প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার ছিলেন বামপনন্থী মনোভাবাপন্ন। তাঁর ইচ্ছে অনুসারে তাঁর নস্বর দেহ গবেষণার স্বার্থে দান করা হবে এসএসকেএম হাসপাতালে, পরিচালকের শেষ ইচ্ছে তা-ই ছিল। দেহদানকারী সংস্থার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলে অঙ্গীকারবদ্ধও হয়েছিলেন তরুণ। তবে শেষ পর্যন্ত চুক্তি পত্রে সই করা হয়নি। যদিও তাতে পরিচালকের শেষ ইচ্ছে পূরণে বাধা পড়েনি। দেহদানের ইচ্ছে প্রকাশের পাশাপাশি পরিচালকের আরও কয়েকটি শেষ ইচ্ছের কথা জানিয়েছে তার দল। সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ জানান, পরিচালক তাঁর মৃত্যুর পর কোনও সরকারি সম্মান জ্ঞাপন বা অনুষ্ঠানের অংশ হতে চাননি। সেখানে তাঁর ইচ্ছে মেনেই লাল পতাকা রাখা হবে তাঁর দেহের সঙ্গে। বাংলায় শিল্পীদের শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় রবীন্দ্র সদনে। দেওয়া হয় গান স্যালুটও। তবে এক্ষেত্রে বামপন্থী পরিচালকের ইচ্ছেকেই মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে।

সোমবার দুপুরে পরিচালকের দেহ হাসপাতাল থেকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য এনটি ওয়ান স্টুডিয়োয় নিয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকেই আবার ফিরিয়ে আনা হবে হাসপাতালে। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিচালকের দেহ গ্রহণ করার জন্য তারা প্রস্তুত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − six =