রাঁচির পানশালায় গুলি করে খুন বাঙালি ডিজেকে

সোমবার ভোররাতে রাঁচির পানশালা খুন করা হল এক বাঙালি ডিজেকে। অত্যাধুনিক রাইফেল দিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে এক ব্যক্তি। বলতে গেলে একেবারেই বিনা কারণে। এর কয়েক ঘণ্টা পর ওই দুষ্কৃতীকে বিহারের গয়া থেকে গ্রেফতার করে ঝাড়খণ্ড পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, তার নাম অভিষেক সিং ওরফে ভিকি। সে রাঁচিরই বাসিন্দা, তবে তার আদি বাড়ি বিহারের পটনায়।

তবে, যে কায়দায় সন্দীপকে মারা হয়েছে, তাতে মনে হতে পারে এটা ঝাড়খণ্ড নয়, বোধহয় আমেরিকা। যেখানে বিনা দ্বিধায় বন্দুক নিয়ে ঘুরতে পারে যে কেউ। ক্লাবের সিসিটিভি ক্যামেরায় এই ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ড পুরোটাই ধরা পড়েছে। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, খালি গায়ে শুধুমাত্র হাফপ্যান্ট পরা এক ব্যক্তিকে। তার মুখ অবশ্য একটা কাপড়ে ঢাকা ছিল। আর হাতে ছিল একটি অত্যাধুনিক রাইফেল। সন্দীপকে সে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে। এরপর কয়েক পা এগিয়ে মাটিতে পড়ে যায় সন্দীপ। অভিযুক্তকে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। ফুটেজটির টাইমস্ট্যাম্প অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটে সোমবার ভোর ১টা বেজে ১৮ মিনিটে। পরে, আহত অবস্থায় সন্দীপকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখনও বেঁচে ছিলেন। কিন্তু, চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়।

একেবারেই নির্ঝঞ্ঝাট ব্যক্তি বলতে যা বোঝায়, তেমনটাই ছিল সন্দীপ প্রামাণিক ওরফে ‘ডিজে স্যান্ডি’। কলকাতার ছেলে। মাত্র ২০ দিন আগে এক্সট্রিম স্পোর্টস বার নামে, ঝাড়খণ্ডের রাঁচি শহরের এক ক্লাবে ডিজে হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন। এদিকে রাঁচি এলাকায় ডিজে হিসেবে তাঁর বেশ নামডাক ছিল।

এদিনের এই ঘটনা প্রসঙ্গে রাঁচির এসএসপি চন্দন কুমার সিনহা জানান, ‘ঘটনার পরপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এদিকে আমরা জানতে পেরেছিলাম অভিযুক্ত বিহারের গয়ায় রয়েছে। এরপর, আমরা গয়া পুলিশের সাহায্য চাই এবং অবিলম্বে সেখানে একটি দল পাঠাই। এরপর ওকে গয়ায় ধরা হয়। আমরা অভিযুক্তকে রাঁচিতে নিয়ে আসছি। গুলি চালানোর সঠিক কারণ জানতে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ পুলিশের তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, অভিষেক সিংয়ের নামে দুটি বন্দুকের লাইসেন্স আছে। তবে দুটিই সম্ভবত জাল। যে রাইফেলটি সে ব্যবহার করেছিল,সেটি সম্পর্কে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, গুলি চালানোর কয়েক ঘণ্টা আগে ওই বারে বসে মদ খাচ্ছিল অভিষেক সিং এবং তার বন্ধুরা। এক সময়, বারের কর্মীদের সঙ্গে তাদের তর্কও হয়। এর পাশাপাশি পুলিসের তরফ থেকে এও জানানো হয় যে, অভিযুক্ত অভিষেক সিংয়ের দুটি গাড়ি আছে। এই গাড়িদুটি নিয়েই সে পালিয়েছিল। দুটি গাড়িই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অভিষেকের তিন বন্ধু প্রতীক, মহম্মদ সমীরউদ্দিন এবং মৃত্যুঞ্জয়কেও এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সন্দীপকে খুন করার ঘটনায় বারের মালিক বিশাল সিং জানান, রবিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বারে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল। এরপর বারের কর্মীরা দুই পক্ষকেই বের করে দেয়। বারের তরফ থেকে পুলিশকেও এই ঘটনা জানানো হয়। রাত ১১টা নাগাদ সেখানে এসে পুলিশ একজনকে গ্রেফতারও করে। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কর্মীরা বাড়ি যাচ্ছিলেন, সেই সময়ই অভিযুক্ত বন্দুক নিয়ে ফিরে আসে। কোনও কথা না বলে, সন্দীপ প্রামাণিককে গুলি করে। সঙ্গে বার মালিক বিশাল এও জানান,’তর্কাতর্কিতে সন্দীপের কোনও ভূমিকাই ছিল না। উনি তর্কে অংশও নেননি। উনি খুব শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। বিনা কারণে ওঁকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। আসলে, অপরাধীরা যাদের সঙ্গে আগে ঝগড়া হয়েছিল তাদের খুঁজছিল। প্রথমে, ওরা সন্দীপকে গুলি করে। তারপর, কাউকে খুঁজে না পেয়ে পার্কিং এলাকায় গিয়ে বাতাসে একাধিক গুলি চালায়। সন্দীপ প্রামাণিক রাঁচি সার্কেলের অন্যতম সেরা ডিজে ছিলেন। অকারণে একটা নিরীহ প্রাণ চলে গেল। আমরা ওঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 12 =