‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বঙ্গের বুদ্ধিজীবী মহল, মুখ্যমন্ত্রীকে আইনি নোটিস পরিচালক বিবেকের

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বাংলার বুদ্ধিজীবী মহলও। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, শান্তি-সৌহার্দ্য বজায় রাখতে এই রাজ্যে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ নিষিদ্ধ করা হল।কারণ, এই সিনেমায় বেশ কিছু এমন ছবি দেখানো হয়েছে তা রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। আর রাজ্যে যাতে কোনও ধরনের অশান্তির বাতাবৎণ তৈরি হোক তা চান না মুখ্যমন্ত্রী। সেই কারণেই কলকাতা থেকে জেলা সর্বত্র শান্তি বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত।
এদিকে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বিশিষ্টজনেদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। যেমন তৃণমূলের ঘরের লোক হিসেবে পরিচিত শিল্পী শুভাপ্রসন্নর মন্তব্য, ‘এই সিদ্ধান্ত কোনও রাজনৈতিক সুবিধা দেবে না। বরং নিষিদ্ধ করে ছবিটাকেই গুরুত্ব দেওয়া হল।’ একই সুর শোনা গেছে নাট্যব্যক্তিত্ব দেবেশ চট্টোপাধ্যায় থেকে সুমন মুখোপাধ্যায়ের গলাতেও।তবে এদিকে আবার মমতার কথা যুক্তিযুক্ত বলেই মনে করছেন কবি সুবোধ সরকার এবং অভিনেতা কৌশিক সেন।
‘দ্য কেরালা স্টোরি’-কে নিষিদ্ধ করা নিয়ে শুভাপ্রসন্ন আরও এক পা এগিয়ে বলেন, ‘আমি কোনও শিল্পপ্রচেষ্টার বিরোধিতা পছন্দ করি না। এ ক্ষেত্রেও আমি সমর্থন করতে পারছি না। এর ফলে ছবিটা বেশি প্রচার পেয়ে গেল! ভাল বা মন্দ বিচার করার দায়িত্ব মানুষের উপরেই ছাড়া উচিত।’ সঙ্গে এ প্রশ্নও তোলেন, সেন্সর বোর্ড যখন ছাড় দিয়েছে, তখন প্রদর্শনে বাধা কোথায় তা নিয়েও।একই সুরের অনুরণন নাট্যকার ও পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও।তাঁর বক্তব্য, ‘কোনও ছবি বা নাটকে যদি মনে হয় ভুল কথা বলা হয়েছে, তবে তার পাল্টা নতুন কিছু করতে হয়। সেটার উপরে নিষেধাজ্ঞার কোনও অর্থ হয় না। আমি যেটুকু শুনেছি, তাতে ছবিটা তেমন কিছু হয়নি। মানুষ এমনিতেই গ্রহণ করতেন না। তবে এখন নিষেধাজ্ঞা কৌতূহল বাড়িয়ে দেবে। অনেকেই দেখবেন।’ পাশাপাশি নাট্যব্যক্তিত্ব সুমনের বক্তব্য, ‘এই ছবিটা ঠিক কেমন আমি জানি না। তবে আমি যে কোনও নিষেধাজ্ঞারই বিরুদ্ধে।’
এদিকে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে রয়েছেন কবি সুবোধ সরকার। জানান, ছবি তিনি দেখেননি, তবে সংবাদমাধ্যমে পড়েছেন রিপোর্ট। তাতে তাঁর প্রাথমিক ধারনা, যাঁরা আগুন লাগাতে চাইছেন, তাঁদের স্পর্ধিত স্ফুলিঙ্গে জল ঢেলে না দিলে বিপদ অনিবার্য। সেই জল ঢালার কাজটি করেছেন রাজ্য সরকার। এরই রেশ ধরে অভিনেতা কৌশিক সেনেরও বক্তব্য, ‘শিল্পের স্বাধীনতার কথা বলতে গেলে সমাজের কথাও মাথায় রাখতে হয়।’ পাশাপাশি এও বলেন, ‘আমরা শিল্পের স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে চারপাশের বদলে যাওয়াটা মনে রাখি না। যাঁরা এই ছবি দেখবেন, সেই মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজটাই সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক। সব ধর্মেই। তাঁরা সমাজমাধ্যমকে ব্যবহার করে বিদ্বেষ ছড়াবেন।কিন্তু গোলমাল হলে তাঁদের গায়ে আঁচ লাগে না। ভোগেন গরিবরা। গোষ্ঠীসংঘাত হলে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।’ সঙ্গে এও মনে করিয়ে দেন,‘পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক কালে যা যা ঘটেছে, তাতে ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আবার একটা হিংসার পরিবেশ তৈরি হতে পারে।’
এদিকে‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমাকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আইনি নোটিস দিলেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। এই দুই সিনেমা সম্পর্কে করা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ারও দাবি জানান পরিচালক।সূত্রে খবর, ৮ জুন, সোমবার ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সিনেমাটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরই ৯ জুন, অর্থাৎ মঙ্গলবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যৌথভাবে নোটিস দেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী, পল্লবী জোশী এবং অভিষেক আগরওয়াল। নোটিস পাঠানোর বিষয়টি টুইটারেও জানান পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। টুইটারে তিনি আরও লেখেন, ‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের এবং আমাদের চলচ্চিত্রগুলি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ এবং ২০২৪-এর আসন্ন ফিল্ম ‘দ্য দিল্লি ফাইলস’-কে বদনাম করার উদ্দেশ্যে করা মিথ্যা এবং অত্যন্ত মানহানিকর বিবৃতি দিয়েছেন।
পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমাকে ‘ষড়যন্ত্র’ এবং এবং বেশিরভাগ অংশ ‘কাল্পনিক ও পরিকল্পিত’ বলে উল্লেখ করেন। এই মন্তব্য তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো আইনি নোটিস পাঠিয়ে বলা হয়েছে, ‘আপনি একই টুইট করেছেন এবং সিনেমার নাম না নিয়ে বিধানসভায় বিবৃতিও দিয়েছেন। আপনি আরও বলেছেন যে, অশান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করে সিনেমাটি তৈরি করা রয়েছে। আপনিও জনগণকে সিনেমাটি না দেখার আহ্বান জানান।’ আর এখানেই বিবেকের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সমস্ত কঠোর পরিশ্রম, প্রতিশ্রুতি, সত্যতা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যা ‘অপূরণীয়’ বলেও দাবি করেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। তাই এই ধরনের মন্তব্যের সমর্থনে হয় যথার্থ প্রমাণ দেওয়া অথবা মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয় আইনি নোটিসে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 2 =