ভালো জায়গায় বাংলা, তবে ২ রানের জন্য শতরান হাতছাড়া সুদীপের

ইডেনে রনজি ট্রফির দ্বিতীয় দিনের শেষে সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান করছে বাংলা। প্রথম ইনিংসে উত্তরাখণ্ডকে ২১৩ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর দ্বিতীয় দিনের শেষে বাংলার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ২৭৪। ফলে অভিমন্যু ঈশ্বরণের দল প্রথম ইনিংসে ৬১ রানের গুরুত্বপূর্ণ লিড পেয়েছে। দলের হয়ে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন অভিজ্ঞ ব্যাটার সুদীপ চট্টোপাধ্যায় এবং তরুণ সুমন্ত গুপ্ত। এই দুই ব্যাটারের ধৈর্যশীল জুটিই দ্বিতীয় দিনে বাংলাকে বিপদমুক্ত করে স্থিতিশীলতা এনে দেয়।

দিনের শুরুটা কিন্তু খুব একটা আশাব্যঞ্জক ছিল না। আগের দিনের ৮ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে বাংলা। সকালটা ছিল কিছুটা নড়বড়ে। ৮.২ ওভারের মাথায় বাংলা হারায় দ্বিতীয় উইকেট—সুদীপ ঘরামি ১৫ রানে সাজঘরে ফেরেন। এরপর ক্রিজে-এ নামেন অনুষ্টুপ মজুমদার। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাবে খেলতে থাকেন। দেবেন্দ্র বোরার গতিময় বলে তিনি আউট হন ৩৫ রানে। দলীয় রান তখন ৬৩।

এরপর আরও বিপাকে পড়ে বাংলা। উইকেটরক্ষক ব্যাটার অভিষেক পোড়েল বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মাত্র ২১ রানে ফেরেন তিনি। ৯৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কার্যত চাপে পড়ে যায় বাংলা। সেই অবস্থায় দলের রক্ষাকর্তা হয়ে ওঠেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ও সুমন্ত গুপ্ত। দু’জনেই ধৈর্য, শৃঙ্খলা ও টেস্ট ব্যাটিংয়ের ক্লাসিক ধারা বজায় রেখে খেলতে থাকেন। প্রতিপক্ষের বোলাররা লাইন-লেংথ পাল্টে দিলেও এই জুটি এক ইঞ্চিও নড়েননি। এক সময় রক্ষণাত্মক থেকে ধীরে ধীরে আক্রমণাত্মক রূপ নিতে থাকেন দুজনেই।

দু’জনের পার্টনারশিপ যখন দৃঢ় হতে থাকে, তখন স্কোরবোর্ডও ক্রমশ বাংলার পক্ষে কথা বলতে শুরু করে। ১৫৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে সুদীপ এবং সুমন্ত দলকে বিপদমুক্ত করেন। ২৫৪ রানের মাথায় সুদীপ চট্টোপাধ্যায় যখন ৯৮ রানে আউট হন, তখন কার্যত বাংলার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের দখলে। মাত্র ২ রানের জন্য শতরান মিস করলেও তাঁর ইনিংস ছিল একেবারে ধ্রুপদী ঘরানার। ২৬৪ বলের ধৈর্যশীল এই ইনিংসে তিনি ১২টি চমৎকার বাউন্ডারি মারেন। এক কথায়, এটি ছিল বাংলার ইনিংসের মূল স্তম্ভ।

অন্যদিকে সুমন্ত গুপ্ত দিনের শেষে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। ৮২ রানে অপরাজিত এই তরুণ ব্যাটারের ১৪৯ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চমৎকার বাউন্ডারি। তাঁর আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য স্পষ্ট করে দিল, আগামী দিনে তিনি বাংলার ব্যাটিং লাইন-আপের অন্যতম ভরসা হতে চলেছেন। আগামীকাল সকালে তাঁকে সঙ্গ দেবেন মহম্মদ শামি ও আকাশদীপের মতো বোলাররা, যাঁরা প্রয়োজনে ব্যাট হাতে অবদান রাখতেও সক্ষম।

বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লার পরিকল্পনা এখন স্পষ্ট — যতটা সম্ভব বড় লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে উত্তরাখণ্ডকে দ্রুত চাপে ফেলে দেওয়া। কারণ ইডেনের পিচে ধীরে ধীরে টার্ন ও ভাঙন দেখা দিতে শুরু করেছে, যা স্পিনারদের জন্য সাহায্যপ্রদ হতে পারে। তাই বাংলার লক্ষ্য থাকবে অন্তত ১০০ রানের ওপরে লিড নিয়ে প্রতিপক্ষকে দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত অলআউট করে জয় দিয়ে রনজি অভিযান শুরু করা।

দ্বিতীয় দিনের শেষে ইডেনের গ্যালারিতে বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখে ছিল আশাবাদী হাসি। কারণ সুদীপের ধ্রুপদী ইনিংস ও সুমন্তর ধৈর্যের মিশেলই এখন পর্যন্ত বাংলাকে এগিয়ে রেখেছে এই লড়াইয়ে। আগামীকাল সকালে তাদের লক্ষ্য হবে এই লিড আরও বড় করা এবং জয়কে দৃশ্যমান করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × one =