ইডেনে রনজি ট্রফির লড়াইয়ে দ্বিতীয় দিনের শেষে ৬১ রানে এগিয়ে ছিল বাংলা। শুক্রবার সকালে লক্ষ্য ছিল লিড দেড়শোর ঘরে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় অভিমন্যু ঈশ্বরণের দল। আগের দিন ৮২ রানে অপরাজিত থাকা সুমন্ত গুপ্ত তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনের শুরুতেই দেবেন্দ্র বোরার বলে সাজঘরে ফেরেন। সুমন্তের আউটের পরই কার্যত ধসে পড়ে বাংলার ইনিংস। একে একে আউট হন আকাশ দীপ, মহম্মদ শামি এবং ঈশান পোড়েল। শেষ পর্যন্ত বাংলার ইনিংস গুটিয়ে যায় ৩২৩ রানে। ফলে প্রথম ইনিংসে তারা ১১০ রানের লিড পায়।
৬ উইকেটে ২৭৪ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল বাংলা। কিন্তু সুমন্তের বিদায়ের পর দল আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। দেবেন্দ্র বোরা দারুণ বোলিং করে ৭৯ রানে ৬ উইকেট দখল করেন। বাংলার ইনিংস শেষ হয়ে যেতেও বেশি সময় লাগেনি। ২০ রানে অপরাজিত ছিলেন সুরজ সিন্ধু জয়সওয়াল। দলের বাকি ব্যাটাররা তেমন প্রতিরোধ গড়তে পারেননি।
প্রথম ইনিংসে ১১০ রানে পিছিয়ে থেকে উত্তরাখণ্ডের শুরুটা ছিল বিপর্যস্ত। আকাশ দীপের গতিতেই ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে কেবল ১ রানে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার অবনীশ সুন্ধা। সেই সময় মনে হচ্ছিল, বাংলার পেস আক্রমণ হয়তো ম্যাচটিকে নিজেদের দখলে নিয়ে নেবে। কিন্তু এরপর খেলার মোড় ঘুরে যায়।
দ্বিতীয় উইকেটে প্রশান্ত চোপড়া ও কুণাল চান্ডেলা জুটি গড়ে দলকে উদ্ধার করেন। দুই ব্যাটারই ধীরে ধীরে সেট হয়ে যান এবং বাংলার বোলারদের সামনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবে দাঁড়িয়ে যান। লাঞ্চের পর থেকে চা বিরতি পর্যন্ত তাঁরা সহজেই সামলেছেন শামি, আকাশ দীপ ও ঈশান পোড়েলদের বোলিং। যদিও শামি ছিলেন অত্যন্ত কৃপণ—১৫ ওভারে মাত্র ২১ রান দেন, কিন্তু কোনও উইকেট তুলতে পারেননি।
দিনের শেষে উত্তরাখণ্ডের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ১৬৫। অর্থাৎ তারা এখন ৫৫ রানে এগিয়ে। বাংলার বোলারদের মধ্যে আকাশ দীপ ও বিশাল সুনীল ভাটি ১টি করে উইকেট পেয়েছেন। কিন্তু বাকিরা উইকেটের মুখ দেখেননি। বিশেষত, শামির ধারাবাহিক মেইডেন ওভার দিয়েও সাফল্য না পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—ইডেনের উইকেট কি অতিরিক্ত ব্যাটিং সহায়ক হয়ে পড়েছে?
তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ম্যাচটি কার্যত ড্রয়ের দিকেই এগোচ্ছে বলে মনে করছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। শেষ দিনে যদি কোনও দল দ্রুত ব্যাটিং ধস নামাতে না পারে, তবে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হবে প্রথম ইনিংসের লিডে। সেক্ষেত্রে ১১০ রানের লিডের সুবাদে ৩ পয়েন্ট পাবে বাংলা, আর ১ পয়েন্ট পাবে উত্তরাখণ্ড।
বাংলার দলে বোলিং ইউনিট যতই শক্তিশালী হোক না কেন, উইকেট থেকে সহায়তা না পেলে বিপক্ষ ব্যাটারদের আটকানো কঠিন। বিশেষত চোপড়া-চান্ডেলার মতো পরিণত ব্যাটাররা যখন উইকেটে থিতু হন, তখন তাঁদের ভাঙা কঠিন হয়ে পড়ে। আগামী দিনে শামিদের ভরসা করতে হবে ইডেনের সকালের হালকা সুইং এবং রিভার্সের ওপর।
সব মিলিয়ে, রনজির এই ম্যাচে বাংলার লড়াই ছিল দারুণ সূচনা ও হঠাৎ পতনের গল্প। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা এবং দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত উইকেট না তুলতে পারা হয়তো ড্রয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে দলকে। তবে ৩ পয়েন্টের সম্ভাবনা ধরে রাখতে শেষ দিনে জ্বলে উঠতে হবে পেস আক্রমণকে।

