দাম্পত্যে কলহ কতটা জরুরি?

আইটি সেক্টরে কর্মরতা বছর ৩২-এর সৌরসেনী। ২ বছরের বাচ্চা নিয়ে হিমশিম। বরকে সংসারের কাজের কথা বললেই তিনি এড়িয়ে যান। ফাঁকা সময়টুকুতে হয় ওয়েব সিরিজ দেখছেন নয়তো মোবাইলে গেম খেলছেন। দিনের পর দিন বলেও কাজ না হওয়ায়, বলাই ছেড়ে দিয়েছিলেন সৌরসেনী। এভাবেই মাসের পর মাস কেটে যাচ্ছিল।দূরত্ব বাড়ছিল দাম্পত্যেও। কিন্তু বিপদ এল যখন একদিন আচমকা সৌরসেনীর বুকে চাপ লাগা, নিঃশ্বাসের কষ্ট শুরু হল। একদিন দুম করে মাথাটাও ঘুরে গেল। চিকিত্সক দেখলেন প্রেসার হাই।কিছু একটা খটকা লেগেছিল চিকিতসকের। তিনি কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ দিলেন। তখনই আস্তে আস্তে বেরিয়ে এল সৌরসেনীর মনের কথা।তীব্র অভিমান জমে সেখানে। একলা সেই কষ্ট বুকে চাপতে চাপতে প্রথমে অবসাদ, তারপর দাম্পত্য সম্পর্কের দূরত্বের প্রভাব পড়তে শুরু করেছিল। সন্তানকে কীভাবে বড় করবেন সেই ভয় চেপে বসেছিল। তা থেকেই উদ্বেগ।

কোনও কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মতে, গুমড়ে না থেকে মনের কষ্ট, রাগটা বের করে দিলে অনেক হাল্কা হওয়া যায়।দাম্পত্যে মান-অভিমান, রাগ দুঃখ থাকবে। সেটা মিটিয়ে নিতে ঝগড়া হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কথায়, কোনও কারখনা চললে সেখানে শব্দ হবেই। শব্দ থেমে যাওয়া মানে কিছু গন্ডগোল। আবার সবসময় অতিরিক্ত শব্দও গ্রহণীয় নয়। তাই দাম্পত্য কলহেও মাত্রা থাকা জরুরি। কী নিয়ে সমস্যা সেটা দেখা ভীষণ জরুরি।

মন হাল্কা করে-তিন দিন মন খারাপ তিয়াসের। কারণ, বর তার জন্মদিনটাই ভুলে গেছে। অন্য বান্ধবীদের পার্টনাররা যখন জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিচ্ছ, তখন তার বর উইশটাই করল না। অভিমানে চোখের জল বেরিয়ে আসছিল। দুবছর সবে বিয়ে হয়েছে তাতেই এই অবস্থা। মুখ ফুটে কিছু না বললেও মনে মনে গুমড়ে উঠছিল সে।তিন দিন পর ব্যাঙ্কের কাজের জন্য হঠাত্ই স্ত্রীর বার্থ ডেট জানার দরকার পড়ে তার স্বামীর। আর তখনই তিনি বুঝতে পারেন মস্ত ভুল হয়েছে। স্ত্রীকে সরি বলতে যেতেই যেন আগুনে ঘৃতাহুতি পরে। প্রথমে ঝগড়া। তারপর প্রবল কান্না তিয়াসার। বেরিয়ে আসে অভিমান।আর তারপর? মুষল ধারে বৃষ্টি নামার পর যা হয়, পরিষ্কার আকাশ।

বিশ্বাস দৃঢ় করে-অনেক সময় ভুল বুঝে আমরা অনেক কিছু ভেবে নিই। হয়তো দুজনেরই দোষ, হয়তো দুজনেই দুজনের জায়গা থেকে ঠিক। তাই মনে কোনও প্রশ্ন থাকলে, সেটা বলে ফেলুন। ঝগড়া হতেই পারে। তবে ঝগড়াকে বাসি করবেন না কিন্তু।

তবে কি দাম্পত্য কলহ যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর!কোনও কোনও মনোবিদ বলছেন, রাগের মাথায় একটু-আধটু ঝগড়া ঠিক আছে। কিন্তু নিয়মিত সেটা হয়ে গেলে বিরক্তিকর হয়ে উঠবে সম্পর্ক। আসলে কী নিয়ে ঝগড়া সেটা খুব জরুরি। ব্যাপারটা বেশি সিরিয়াস হলে দরকার আলোচনা।আসলে দাম্পত্য ঠিক রাখতে দুজনেই যাতে দুজনকে মনের কথা বলতে পারেন, সেটা খুব জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 13 =