রাত ১২ টার আগেই রাজভবন থেকে চিঠি গেল নবান্নে এবং দিল্লিতে

উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চরমে উঠেছে। গভীর রাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শনিবার সকালে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল সি.ভি আনন্দ বোস। এই হুঁশিয়ারি যে ফাঁকা হুঁশিয়ারি ছিল না তা রাত ১২টার কয়েক মিনিট আগেই বোঝালেন রাজ্যপাল। শনিবার মধ্যরাতের আট মিনিট আগেই, ১১টা ৪২ মিনিটে একটি সংক্ষিপ্ত এবং ‘রহস্যজনক’ বিবৃতি দেয় রাজভবন। তাতে বলা হয়, ‘পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল দু’টি গোপনীয় চিঠিতে সই করে শনিবার রাতে মুখবন্ধ করে একটি নবান্নে ও একটি দিল্লিতে পাঠিয়েছেন।’দুটি খামবন্দি চিঠি পাঠানো হয় রাজভবনের তরফ থেকে। যার মধ্যে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে নবান্নে এবং অপর চিঠিটি পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। যদিও দিল্লিতে কার কাছে চিঠি পাঠানো হল বা চিঠিতে ঠিক কী লেখা রয়েছে, তা এখনও রাজভবনের তরফে স্পষ্ট করা হয়নি। এদিকে রাজভবনের পক্ষে স্পষ্ট করেই জানানো হয় যে চিঠির বিষয় ‘গোপনীয়’। যে কোনও গোপন বিষয় নিয়েই যেমন জল্পনা বেশি হয়, তেমনটা এই ক্ষেত্রেও।

এদিকে বিতর্কের সূত্রপাত, শুক্রবার বিকালে রেজিস্ট্রারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মন্তব্য ঘিরে। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তাঁকে মহম্মদ বিন তুঘলকের সঙ্গেও তুলনা করতে দেখা যায় শিক্ষামন্ত্রীকে। যার পাল্টা জবাব দিয়ে শনিবার সকালে রাজ্যপাল সি.ভি আনন্দ বোস কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।’ অর্থাৎ মধ্যরাতে রাজ্যপাল কী পদক্ষেপ করবেন, তা নিয়ে দিনভোর জল্পনা চলে। এদিকে আবার এদিন বিকালে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে রাজভবনে তলব করা হয়। সেখানে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর সঙ্গে রাজ্যপালের বৈঠক চলে। যদিও তাঁদের মধ্যে কী আলোচনা হয়, তা স্পষ্ট হয়নি। নানান জল্পনার মাঝে অবশেষে রাত ১২টার মিনিট দশেক আগে রাজভবনের তরফে দুটি চিঠি পাঠানো হয়। আর এই দুটি চিঠিতে কী লেখা রয়েছে তা স্পষ্ট না হলেও এর যে বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে তা বলা বাহুল্য।

ওয়াকিবহালের অনুমান, রাজ্যপাল একটি চিঠি যেমন নবান্নে পাঠিয়েছেন, অপর চিঠিটি রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রীকে পাঠাতে পারেন। রাজ্যের সামগ্রিক শিক্ষা পরিস্থিতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে যে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ করতে পারেন বলে একাংশের অনুমান।

তবে বিকাশ ভবন বনাম রাজভবনের চলতি সংঘাত নিয়েই যে ‘অ্যাকশন’, শনিবার সকালে তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। দুপুরে ‘যুদ্ধের আগুনে ঘি’ ঢালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু  তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডলে ‘রক্তচোষা’ বলে আক্রমণ করে। যদিও রাজ্যপালের নাম নেননি তিনি। তবে শনিবার মধ্যরাতকে ‘রাক্ষস প্রহর’ বলে তকমা দিয়ে, তার জন্য তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন বলে লেখেন ব্রাত্য।

এই আবহই ইঙ্গিত দিচ্ছে, রাজ্যপাল বর্ণিত ‘অ্যাকশন’ ব্রাত্য তথা শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধেই হয়ে থাকতে পারে। এ নিয়ে কোনও মহল থেকে কোনও ঘোষণা না থাকলেও, রাজ্যপালের জোড়া পত্রবাণের লক্ষ্য কে, সেই জল্পনায় সবচেয়ে বেশি উঠে আসছে ব্রাত্যের নাম। তেমন ইঙ্গিত মিলছে তৃণমূল বা বিজেপি মুখপাত্রদের কথাতেও। তবে ব্রাত্যের এই বক্তব্য়ের পরই শনিবার বিকেলে রাজভবনে তলব করা হয় রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে। রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর কী কথোপকথন হয়েছিল তা নিয়েও মুখে কুলুপ আঁটেন দুজনেই।

এদিকে এদিন রাজভবনের তরফ থেকে যে  বার্তা দেওয়া হয়  তাতে ছিল ধোঁয়াশা। নবান্নের চিঠি তিনি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখেছেন বলে ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু ‘দিল্লি’ বলে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। রাজ্যপালের নিয়োগকর্তা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি দিল্লির রাইসিনা হিলসের বাসিন্দা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও দিল্লির বাসিন্দা। আবার যদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কোনও বিষয় হয়ে থাকে তবে দিল্লির বাসিন্দা অমিত শাহকেও চিঠি দিয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু রাজভবন শুধু ‘দিল্লি’ বলায় সেটি রাষ্ট্রপতি ভবন না কি কেন্দ্রীয় সরকার, তা নিয়েও ধোঁয়াশা থেকেই গেল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × three =