যাদবপুরের ঘটনার জের! ‘ব়্যাগিং’ নিয়ে আদালতে গোপন জবানবন্দি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের

কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা মৃত্যু তুলে দিয়েছে হাজার প্রশ্ন। নগ্ন করেছে র‌্যাগিং-এর ভয়াবহ ছবিকে। নাড়িয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশাসনকে।
সেই একটা মৃত্যুই এবার শাপে বর হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক ছাত্রের জীবনে। দীর্ঘদিন ধরে র‌্যাগিং এর অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকা বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের ছাত্র বিশ্বজিৎ হাজরা। অবশেষে শনিবার পুলিশ তাঁকে গোপন জবানবন্দি দিতে নিয়ে যায় আলিপুর আদালতে।
অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই হস্টেলে বিশ্বজিৎ র‌্যাগিংয়ের শিকার। কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশাসন, সকলকেই সে কথা জানিয়েছিলেন। কোনও লাভ হয়নি। উল্টে র‌্যাগিংয়ের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। আর তাতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দূরে থাক, অভিযোগ রেজিস্ট্রারও তাতে মদত দিয়েছেন। যাদবপুরে প্রথম বর্ষের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরই র‌্যাগিং নিয়ে চর্চায় রাজ্য-রাজনীতি। তপ্ত পরিস্থিতিতে কার্যত ‘চাপের মুখে’ পুলিশ এবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের র‌্যাগিং-এর অভিযোগ নিয়ে তৎপরতা দেখাচ্ছে বলেই মনে করছে তথ্যভিজ্ঞ মহল।
বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, তিনি বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভর্তি হয়েছিলেন ২০১৯ সালে। চলতি বছরে তাঁর কোর্স শেষ হয়েছে। অভিযোগ শুরু থেকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে তাঁকে ‘র‌্যাগিং’ এর মুখে পড়তে হয়। অভিযোগ, হস্টেলের ঘরে তাঁকে সিনিয়রেরা ‘ইন্ট্রো’র নামে সারা রাত আটকে রাখতেন, তাঁকে দিয়ে মদ কেনানো হত, চলত অকথ্য গালিগালাজ। এমনকি, ছাত্রের যৌন চাহিদার বিষয়েও প্রশ্ন করে অস্বস্তিতে ফেলা হত বলে দাবি। ছাত্রটি জানিয়েছেন, এই ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি বার বার অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ দূরের কথা, র‌্যাগিংয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। সংবাদমাধ্যমের কাছে বিশ্বজিৎ দাবি করেছেন, তাঁর ঘরে সিনিয়রেরা প্রস্রাব করে দিতেন। বোম ফাটিয়ে ঘর ধোঁয়ার ভরিয়ে দেওয়া হত। ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও বাইরে ফেলে দেওয়া হত। খাবারও বন্ধ করে দেওয়া হত।
হস্টেল থেকে সম্প্রতি তাঁকে উঠে যেতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্বজিৎ। অভিযোগ, তিনি তথাকথিত পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় তাঁর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। হস্টেলের নিরাপত্তারক্ষী খোদ রেজিস্ট্রারের নির্দেশেই নাকি ছাত্রকে হস্টেল থেকে বার করে দিতে চাইছেন। তাঁকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, এই ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। পুলিশ, প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সম্প্রতি যাদবপুরের ঘটনায় তাদের টনক নড়েছে। সেই কারণেই বয়ান রেকর্ড করার জন্য আদালতে ডাকা হয়েছে তাঁকে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে গত ১০ অগস্ট মৃত্যু হয়েছে নদিয়ার এক পড়ুয়ার। তিনি র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং বর্তমান ছাত্র মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট ১২ জন হস্টেল আবাসিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × three =