কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বিউটি

নিজস্ব প্রতিবেদন, পূর্ব বর্ধমান: সোমবার ইদুজ্জোহা আনন্দের পরিবেশ বিষাদে পরিণত হল গুসকরায়। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা শহরের বাসিন্দা এক গৃহবধূ বিউটি বেগম শেখ (৪৩)।
তাঁর স্বামী শিলিগুড়িতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। একমাস সেখানেই ছিলেন গুসকরা শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাচাঁদা এলাকার বাসিন্দা ওই বধূ। সোমবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ট্রেন ধরে গুসকরায় ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু দুর্ঘটনা কাড়ল তাঁর প্রাণ। দুর্ঘটনার পর জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে স্ত্রীর মৃতদেহ শনাক্ত করেন স্বামী হাসমত শেখ। ময়নাতদন্তের পর রাতেই দেহ গুসকরায় নিয়ে আসা হয়।
জানা গিয়েছে, গুসকরা শহরের ইটাচাঁদার বাসিন্দা হাসমত শেখের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে বিশাল শেখ কেরলে কাজ করেন। মেয়ে সুইটি খাতুনের একমাস আগে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বীরভূম জেলায় মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। মেয়ের বিয়ের পর বিউটি খাতুন শেখ তাঁর স্বামীর কাছে গিয়েছিলেন। হাসমত শিলিগুড়িতে ঘরভাড়া করে থাকেন। কয়েকদিন সেখানেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী।
হাসমত শেখ বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলাম। ওর হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস ট্রেন ধরার কথা ছিল। কিন্তু পরে জানতে পারি ওই ট্রেনটি ছিল না। তাই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে চেপেছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্ত্রীর মোবাইলে ফোন করছিলাম। কিন্তু বারবার সুইচ অফ বলছিল। এরপর দুপুর নাগাদ জলপাইগুড়ি হাসপাতালে আসি স্ত্রীর ছবি দেখাই। তারপর শোয়ানো দেহগুলোর কাছে গিয়ে আমার স্ত্রীর দেহটি দেখতে পাই।’
হাসমত শেখ জানিয়েছেন, এদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাঁর জন্য রান্না করে দিয়েছিলেন বিউটি খাতুন। কিন্তু নিজে খাননি। সকালে স্টেশনে এসে স্ত্রীর জন্য ফল ও বিßুñট কিনে হাতে ধরিয়ে কাজে চলে যান। হাসমতের আফশোস, ‘হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনটা থাকলে আমার স্ত্রীকে হারাতে হত না।’ সোমবার দুপুর নাগাদ গুসকরার ইটচাঁদার বাড়িতে মৃত্যু সংবাদ এসে পৌঁছয়। মৃতার মেয়ে সুনয়নী খাতুন বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল ফোনে, মা ফোনে বলেছিল শেষের দিকের কামরায় উঠেছে, তারপর আর যোগাযোগ করতে পারিনি। পরে খবর পেলাম ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মায়ের।’
এদিন মৃত্যু সংবাদ পৌঁছতেই গুসকরার বাড়িতে পাড়া-প্রতিবেশীরা ভিড় জমান। গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখোপাধ্যয় বলেন, ‘আমরা খবর পাওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। মৃতদেহ সৎকারের সবরকম ব্যবস্থা করা হবে। আমরা পরিবারের পাশে আছি।’ উল্লেখ্য, গত বছর জুন মাসে দুর্ঘটনার স্মৃতি ফিরিয়ে সোমবার সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন ছাড়ার পর রাঙাপানি স্টেশনের কাছে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি। দুমড়ে মুছড়ে যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পেছনের দিকে থাকা দু’টি সাধারণ শ্রেণির কামরা সহ আরও বেশ কিছু কামরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − one =