পাত্রসায়র ব্লকের হদলনারায়ণপুরের বড় মণ্ডল বংশের পুজো

নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: বিশ্বায়নের বিশাল বৃত্তে থিম নির্ভর পুজো আজ দিকে দিকে। দর্শনার্থীদেরও বর্তমানে পছন্দ থিমের পুজো। তা বলে সাবেকিয়ানাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে একশো বছরের অধিক পুরনো পুজোগুলি সাবেকিয়ানার ধারক ও বাহক। বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়ের ব্লকের হদলনারায়ণপুর গ্রামে রামপুর বড় মণ্ডল দেবোত্তর অ্যাস্টেটের পরিবারিক দুর্গা পুজো প্রায় আড়াইশো বছরে পুরনো। প্রাচীনত্বের সঙ্গে নবীনত্বের সার্থক মিলনক্ষেত্র রূপে এই পারিবারিক পুজো যথেষ্ট পরিচিত।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বিষ্ণুপুর মল্ল রাজ গোপাল সিংয়ের আমলে (১৭১২- ১৭৪৮) মণ্ডল পরিবারের প্রতিষ্ঠা করেন মুচিরাম ঘোষ। সেখান থেকে মণ্ডল পদবী লাভ। এই সনদ সৌভাগ্যকে স্মরণে রেখে নবজাত এক বংশধরের ‘সানন্দ’ নামকরণ করা হয়। এই বংশের বেচারাম মণ্ডলের সময়কালে অট্টালিকা, দেব মন্দির ও রাসমঞ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মাষ্টমীতে গঙ্গামাটি লেপনের মধ্য দিয়ে পুজোর শুভসূচনা হয়। মণ্ডল পরিবারের দুর্গোৎসব বৈষ্ণব মতানুযায়ী হয়। পূজার চারদিন ধরে চলে নানান ধরনের সাংßৃñতিক অনুষ্ঠান। পারিবারিক সৌহার্দ্য বর্ধনে, গৃহকর্ত্রীদের রন্ধনভার থেকে মুক্তি দিতে পুজোর সময় সমবেত ভোজনের আয়োজন করা হয়। নাটমন্দিরের বিলাসী ঝাড়বাতির রোশনাইয়ের আমেজে মৌতাতে মজে আবালবৃদ্ধাবনিতা। আসলে ক্ষয়িষ্ণু সামন্ত্রতন্ত্রের অবসান আর নবীন ধনতন্ত্রের উত্থানের দ্বান্দ্বিক মুহূর্তে জেগে থাকে সচেতন পরিবারের পারিবারিক দুর্গোৎসব।
অর্থাৎ বৃহৎ বৃত্তের বাইরে থেকেও উৎসবের রঙে সেজে উঠে গ্রামবাংলার অন্নেষণে প্রতিবছরই নতুনত্বের ছোঁয়া দিয়ে যায়। হদলনারায়ণপুর গ্রামের বড় মণ্ডল বংশের পারিবারিক দুর্গোৎসব। পুজোর কটা দিন মণ্ডল পরিবারের এই পুজোকে কেন্দ্র করে আশপাশের ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের সাধারণ মানুষরা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। তবে জেলার বাইরে থেকেও দর্শনার্থীরা মণ্ডল পরিবারে পুজো দেখতে ভিড় জমিয়ে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − thirteen =