নিজস্ব প্রতিবেদন, কাঁকসা: কাঁকসার রাজকুসুম গ্রামে শাল পিয়ালের ঘন জঙ্গলে আজও একই ভাবে জনপ্রিয় বনকালী। প্রতি বছরের মতো এবছরও মহা ধুমধামে পুজোর আয়োজন করা হয়। পুজো শুরু হয় সকাল ১১টায় শেষ হয় দুপুর ২টোয়।
প্রতিবছর কালী পুজোর পরের দিন জঙ্গলের মধ্যেই বনকালীর মহা ধুমধামে পুজোর আয়োজন হয়ে আসছে। পুজোর সূচনা হয়েছিল আনুমানিক সাড়ে চারশো বছর আগে। রাজকুসুম গ্রামের রায় পরিবারের সদস্য সনৎ কুমার রায় জানিয়েছেন, তাঁদেরই পূর্বপুরুষ এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। পূর্বে জঙ্গলের মধ্যেই মূর্তি এনে পুজোর আয়োজন হত। পুজোর পুরোহিত ছিলেন কাঁকসার গোপালপুরের ভট্টাচার্য বাড়ি থেকে। সেই সময় পুরোহিতকে রীতিমতো লাঠিয়াল সঙ্গে করে জঙ্গলে আনা হত।
গোটা এলাকায় চাষ হত। ছিল না তেমন রাস্তাঘাট। তাই ধান খেতের মাঠের আল দিয়ে লাঠিয়াল দিয়েই আনা হত পুরোহিত। একবছর প্রবল বৃষ্টির সময় মাঠের আল দিয়ে জঙ্গলে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল সকলকে। সেই বছর পুরোহিত স্বপ্নাদেশ পান। দেবী কালী তাঁকে তাঁর বাড়িতেই পুজো করতে বলেন। প্রায় ১০০ বছর আগে দেবীর নির্দেশ মেনে কাঁকসার গোপালপুর গ্রামে ভট্টাচার্য পরিবারে শুরু হয় দেবী কালীর পুজো। যেহেতু জঙ্গলে বহু বছর ধরে পুজো হতো তাই পুরোহিত দেবীর কাছে জানতে চেয়েছিল জঙ্গলে মূর্তি না থাকলে সেখানে সে কোথায় পুজো দেবে।
উত্তরে দেবী তা¥কে জানিয়েছিলেন জঙ্গলের মধ্যে একটি গাছের গায়ে দুটো চোখের আকৃতি দেখা যাবে সেই গাছেই তিনি বিরাজমান থাকবেন। সেই গাছের গোঁড়ায় মূর্তি ছাড়াই হবে পুজো। ভক্তরা নিজেই আসবে পুজো দিতে। তাই রীতি মেনে কালীপুজোর পরের দিন রাজকুসুম গ্রামে জঙ্গলের মধ্যে আজও একই ভাবে চলে বনকালীর পুজো। স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও বনকালীর স্থানে পুজো দিতে জেলা ছাড়িয়ে ভিন জেলা থেকেও হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান প্রতি বছর।
জঙ্গলের মধ্যে পুজোর আয়োজন হলেও আজও থাকে না কোনও মূর্তি। রাজকুসুম গ্রামের বাসিন্দা মাম্পি ব¨্যােপাধ্যায় জানান, দেবীর উপস্থিতি পুজো স্থানের চারিদিকে লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি গাছের গায়ে চোখের আকৃতি দেখা যায়। মানুষ আসেন তাদের মনষ্কামনা নিয়ে। অনেকেই আসে পরিবারের সকলের সুখশান্তি কামনা করতে। আবার অনেকেই আসেন তাঁদের মনস্কামনা পূরণ হলে পুজো দিতে। পুজোর জন্য কাউকে নিমন্ত্রণ করা হয় না। তবে মানুষ প্রতি বছর নিজেই দেবীর মাহাত্যর কথা শুনে ভিড় করেন।