ঢাকা : আজ শনিবার পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ সুপ্ৰিম কোৰ্টেরপ্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আবারও নতুন করে ছাত্রদের আন্দোলন জেগে ওঠায় প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। ছাত্রদের দাবি, বিচারপতিদের পদত্যাগ। হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সংগঠিত আন্দোলনের জেরে প্রথমে আজ সন্ধ্যায় বিচারপতি পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এর আগেই তিনি পদত্যাগ করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতি সহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আজ সন্ধ্যার মধ্যে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের বিষয়ে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
আজ শনিবার বেলা ১-টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি পদত্যাগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সন্ধ্যার মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবো।’
এর আগে সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রধান বিচারপতি সহ অন্যান্যদের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাওয়ের ঘোষণা করেছিলেন। পরে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হতে থাকেন। এখানে তাঁরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের স্লোগান, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘দফা এক দাবি এক, বিচারপতির পদত্যাগ’, ‘শেখ হাসিনার দালালি, চলবে না চলবে না।’
এ সময় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা বেলা একটার মধ্যে পদত্যাগ না করলে তাঁদের পরিণতি হবে শেখ হাসিনার মতো। আমরা প্রধান বিচারপতি সহ দলবাজ বিচারপতিদের বাসভবন ঘেরাও করে পদত্যাগে বাধ্য করব। দলবাজ বিচারপতিদের সরিয়ে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদের মূল উৎপাটন করা হবে।’
হাসনাত বলেন, ‘ছাত্র-জনতার যে গণবিপ্লব সংগঠিত হয়েছে সেটাকে বিতর্কিত করার নানা প্রচেষ্টা চলছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যু করার প্রচেষ্টা দেখেছি। মিলিটারি ক্যু, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যু এবং আজ জুডিশিয়ারি ক্যু করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। আমরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ চেয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম, সেই বিচারপতি অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়ে এক ধরনের ডিজিটাল ক্যু করার চেষ্টা করেছেন। ছাত্র-জনতা এই প্রচেষ্টাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করবে এবং নস্যাৎ করে দেবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা রাজপথ দখল করুন। আপনাদের পার্শ্ববর্তী জেলা কোর্ট, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিরা পদত্যাগ না করছেন, জুডিশিয়ারি ক্যু করার ষড়যন্ত্র থেকে যতক্ষণ না তারা সরে আসছেন ততক্ষণ পর্যন্ত ছাত্র-জনতা রাজপথে থাকবে।’
এদিকে সকালে সব বিচারপতির অংশগ্রহণে প্রধান বিচারপতির ডাকা সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে আদালত পরিচালনা করা যায় এবং বিবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য সকাল সাড়ে ১০টায় ফুলকোর্ট সভা ডেকেছিলেন প্রধান বিচারপতি।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এভাবে আজ ফুলকোর্ট সভা ডাকা একটি ষড়যন্ত্র ছিল। এর আগে বিচারপতিকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যায়িত করে তাঁর পদত্যাগ এবং ফুলকোর্ট সভা বন্ধের দাবিতে আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
এদিকে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘আপনারা শান্ত থাকুন। আপনারা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থান করলেও কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আপনাদের দ্বারা হাইকোর্টের যেন কোনও ক্ষতি সাধিত না হয়।’