আসানসোল: কয়লা পাচার (coal smuggling) মামলায় ধৃত ইসিএলের প্রাক্তন ও বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার(জিএম) সহ আটজনের জামিন নাকচ (bail denied) হল সোমবার আসানসোল সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে (CBI special court) । দু’পক্ষের আইনজীবীর সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী তাদের আরও ১৪ দিনের জন্য জেল হেপাজতের নির্দেশ দেন। অর্থাৎ আগামী ১৬ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
এদিন ধৃতদের তরফে আইনজীবী আশিস চট্টোপাধ্যায় সাতটি ফাইল বিচারকের কাছে জমা দেন। সেই ফাইলে ইসিএলের ধৃত কর্তারা পদে থাকাকালীন কয়লা চুরি নিয়ে যেসব চিঠি দিয়েছিলেন, তা রয়েছে বলে জানা যায়।
আইনজীবী আশিস চট্টোপাধ্যায়, আশিস চন্দ্র কুমার, অমিতাভ মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্যরা যেকোন শর্তে মক্কেলদের জামিন দেওয়ার আবেদন করেন। তাঁরা বলেন, এই মামলায় গত ১৯ জুলাই সিবিআই ৪১ জনের নাম সহ যে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতে আটজনের নাম আছে। তাদের বিরুদ্ধে চার্জও গঠন হয়েছে। তাহলে তাদের আর নতুন করে জেলে রাখা ও জিজ্ঞাসাবাদের কি প্রয়োজন আছে? এছাড়াও, গত ১৪ দিন জেল হেপাজতে থাকাকালীন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তকারী অফিসার মাত্র একদিন কয়েক মিনিটের জন্য জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
সিবিআইয়ের তরফে আইনজীবী রাকেশ কুমার এই আটজনকে নতুন করে আর হেপাজতে নেওয়ার আবেদন না করলেও, তিনি ধৃতদের জামিন দেওয়ার আবেদনের বিরোধিতা করেন। এদিনও সিবিআইয়ের তরফে জেল হেপাজতে থাকার সময় মামলার তদন্তের জন্য ধৃতদের জেরা করার আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক সেই আবেদনও এদিন মঞ্জুর করেছেন।
প্রসঙ্গত, সিবিআই কয়লা পাচারের এই মামলায় গত ১৩ জুলাই প্রথমে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছিল তারা হলেন ইসিএলের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার অভিজিৎ মল্লিক, সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, তন্ময় দাস, বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার এসসি মৈত্র এবং মুকেশ কুমার। এছাড়া রয়েছেন দুই নিরাপত্তা আধিকারিক দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ও রিংকু বেহেরা। পরে সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি তিনদিনের সিবিআই হেপাজতে ছিলেন। বাকি সাতজন পাঁচ দিনের জন্য সিবিআই হেপাজতে ছিলেন।
সিবিআইয়ের আইনজীবী এদিন আদালতে সওয়াল করে বলেন, ইসিএলের এই আধিকারিকদের কয়লা পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল। তাদের মধ্যে মোটা অঙ্কের টাকাও লেনদেন হয়েছে। এদের জামিন দেওয়া হলে তারা পালিয়ে যেতে পারে বা সাক্ষ্যকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন।
যদিও গ্রেপ্তার হওয়া আটজনের আইনজীবীরা সিবিআইয়ের এই দাবি মানতে চাননি। এদিন এজলাসে পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে আইনজীবী আশিস চট্টোপাধ্যায় ও আশিস কুমাররা সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, এফআইআর-এ নাম থাকা অনেককে এখনো জেরা পর্যন্ত করা হয়নি। কয়লা চুরি হয়েছে ইসিএলের লিজ হোল্ড এলাকা থেকে। সেই এলাকার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফ-এর। অথচ তাদের কাউকে ডাকা হয়নি। বেআইনি কয়লা চুরি নিয়ে একটা রিট পিটিশনের মামলায় হাইকোর্ট একটা টাস্ক ফোর্স গঠন করার নির্দেশ দেন। তার মাথায় ছিলেন মেজর রাজা পাল। তাকেও জেরার জন্য ডাকা হয়নি। আইনজীবীরা বলেন, কেউ পালাবেন না। সবাই আসানসোলে থাকেন। অনেকে তো চাকরিও করেন না। তাই তাদের জামিন দেওয়া হোক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ৮ জনের জামিনের আবেদন নাকচ করেন।