প্রোমোটার অয়ন শীলের গ্রেপ্তারির পর থেকে দুর্নীতির ঘটনায় ‘সোনার খনি’-র হদিশ পাওয়া গিয়েছে বলেই দাবি করেছিল ইডি। পুরসভার চাকরিতে দুর্নীত ও প্রচুর বেনামি সম্পত্তির পর অয়নের বিরুদ্ধে আরও এক গুরুতর অভিযোগে সামনে এসেছে। ইডি সূত্রে খবর, পুরসভার টেন্ডারে একচেটিয়া দাপট ছিল অয়নের। ইডি সূত্রে খবর, পুরসভা টেন্ডার পেতে নিজেরই একাধিক সংস্থার নামে দরপত্র জমা দিতেন অয়ন শীল। এই টেন্ডার পাওয়ার সঙ্গেও জড়িয়ে ছিল দুর্নীতি। পাশাপাশি ইডি-র তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে যে, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত অয়ন শীলের ১০ কোটি টাকার সম্পত্তির হদিস পেয়েছে ইডি। অয়ন শীলের নামে রয়েছে জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট এমনকি, ফার্ম হাউসও। বলাগড়ের বহিষ্কৃত তৃণমূলনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়নের সংস্থা ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি মিলিয়ে মোট সম্পত্তিরর পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও বেশি। একইসঙ্গে ইডি-র তরফ থেকেস এও জানানো হয়েছে, রাজারহাট, নিউটাউন, ভাঙড় সহ একাধিক জায়গায় জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে অয়নের। । রয়েছে দুটি কোম্পানি, প্রোডাকশন হাউস ও পেট্রোল পাম্পও। ফলে তদন্তকারী আধিকারিকদের কাছে এখন একটাই প্রশ্ন, শ্ন, কোথা থেকে এত বিপুল পরিমাণ টাকার সম্পত্তি তৈরি করেছেন অয়ন তা নিয়েই। প্রশ্ন উঠেছে উপার্জনের উৎস নিয়েও। ইডি-র আধিকারিকদের সন্দেহ, এর মধ্যেও জড়িয়ে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা।
অন্যদিকে, ইডি-র তদন্তে উঠে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। তল্লাশি চালানোর দিন, অয়নের সল্টলেকের ফ্ল্যাটের ডাস্টবিনেই প্রথম ছেঁড়া ওআমআর শিট দেখতে পান গোয়েন্দারা! সেই শিট ছিল পুরসভার নিয়োগের পরীক্ষার। সূত্রের খবর, সেখান থেকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল তথ্য পায় ইডি। জানা গিয়েছে, প্রায় ৬০টিরও বেশি পুরসভায় ৬ হাজারের বেশি মানুষের বেনিয়মে চাকরি হয়েছে। বঞ্চিত হয়েছেন যোগ্য প্রার্থীরা। আর অয়নকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন ইডি-র আধিকারিকরা, এমনটাও সূত্রে খবর। পাশাপাশি ইডি-র তরফ থেকে এও জানানো হয়েছে, এই ৬০টি পুরসভার তালিকায় কোন কোন পুরসভা ছিল সে ব্যাপারে অয়নের সংস্থা এবিএস ইনফোজেন প্রাইভেট লিমিটেড-এর অফিসে ই-মেল করে সেগুলির নাম বিশদে জানতে চেয়েছে ইডি।
অয়নকে গ্রেফাতারের পর আদালতে ইডি দাবি করেছিল যে, প্রচুর চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, অয়নকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পুরসভার কাজে বরাত পেতে হলে চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি দরপত্র দিতে পারত। প্রভাব খাটিয়ে এবিএস ইনফোজোনের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ভুয়ো কোম্পানির মাধ্যমে দরপত্র জমা করত অয়ন। ফলে তাঁর হাতে থাকা সংস্থায় কাজের বরাত পেত। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই পুরসভা গুলির একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যা হাইকোর্টেও রিপোর্ট আকারে তথ্য পেশ করা হবে।
পাশাপাশি, ৩টি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কাছেও অয়নের ব্যাঙ্কিং ট্রানসাকশানস ও অ্যাকাউন্ট ডিটেলস জানতে চেয়েছে ইডি। মূলত, ইডি আধিকারিকরা অয়নের কলেজ স্ট্রিটের একটি প্রিন্টিং প্রেসে ওএমআর শিট প্রিন্ট করতেন অয়ন। এছাড়াও, এই প্রিন্টিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে আরও কয়েকটা প্রেসের নাম। সেই প্রিন্টিং প্রেসগুলিও এবার ইডির নজরে।