একের পর এক অভিযোগে বিদ্ধ হচ্ছেন সল্টলেকের প্রোমোটার অয়ন শীল। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে শুধু যে নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনাই উঠছে তা নয়, সামনে এসেছে আরও ভয়ঙ্কর সব তথ্য। কারণ, এবার বাবা- ছেলের আত্মহত্যার ঘটনাতেও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠল অয়নের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাটি ঘটে ২০১৮ সালের অক্টোবরে। ২০১৮-র ১১ অক্টোবর হুগলির দেবানন্দপুরে জনৈক শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ছেলে রূপকুমারের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। পুলিশের নথি তাই বলছে। একইসঙ্গে এও জানা গেছে যে, এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের দাবি, ঘর থেকে ‘সুইসাইড নোট’ মিলেছিল। যাতে মৃত্যুর জন্য অয়নকে দায়ী করা হয়। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা তোলার কাজে শ্রীকুমার-রূপকুমারকে কাজে লাগিয়েছিলেন অয়ন। উত্তরপাড়া, বৈঁচী, তারকেশ্বর, আরামবাগ প্রভৃতি এলাকা থেকে প্রায় দু’কোটি টাকা তুলে অয়নকে দিয়েছিলেন শ্রীকুমার ও তাঁর ছেলে। সেই টাকা নিয়ে অয়ন বেপাত্তা হওয়ায় তাঁদের উপরে চাকরিপ্রার্থীদের চাপ বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় তাঁরা বিষ খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ঘটনার কিছু দিন পরে রূপকুমারের স্ত্রী চুঁচুড়া থানায় অয়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, সেই তদন্ত এখনও চলছে।
এরপরই আবার ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চুঁচুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কলকাতার বাসিন্দা, জনৈকা সোমা মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ ছিল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করে দেওয়ার নামে অয়ন ৩৫ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই তত্ত্বে সিলমোহর দিয়েছেন চুঁচুড়ার বাসিন্দা পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী। এক সময় অয়নের ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। অয়ন সম্পর্কে তিনি জানান, কম্পিউটারে কাজের সুবাদে অয়নের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। ২০১৫ সালে চাকরির জন্য অয়নকে অনেকে তাগাদা দিচ্ছিলেন। এরপর খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, অয়ন দীর্ঘদিন ধরেই প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অন্যান্য সরকারি দফতরে চাকরির নামে টাকা তুলেছে। তখনই ওর সঙ্গ ছাড়ি। এ বিষয়ে কাউকে জানালে প্রাণে মারারও হুমকি দিয়েছিল অয়ন।’
এদিকে যাঁরা ছোট থেকেই অয়নকে চিনতেন তাঁরা জানান, এলাকাবাসীর একাংশ জানান, অয়ন এরপর কম্পিউটার সারানোর কাজও শুরু করেন। তারপর বছর তিনেক ব্লক অফিসে করণিকের কাজ করেন। তার পরে প্রোমোটিং ব্যবসায় আসেন। প্রতিপত্তি বাড়ে। থাকতেন কলকাতায়। চুঁচুড়ায় আসতেন কম। টলিউডেও পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। অয়নের বর্তমান এক জানান, ‘টালিগঞ্জের নামী পরিচালকের ছবিতে অয়নটাকা ঢেলেছিলেন বলে শুনেছি। মনে হয়, টলিউডে ওঁর আরও টাকা গিয়েছে। সঠিক তদন্ত হলেই সব সামনে আসবে।’
সূত্র বলছে, বাম আমলে হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে ‘ডেটা এন্ট্রি’-র কাজ পান অয়ন। তখন থেকেই শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে তাঁর পরিচিতি হয়। এরই রেশ টেনে চুঁচুড়া শহর তৃণমূলের সহ-সভাপতি বিপ্লব সরকার জানান, ‘বাম আমলে নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েই ওঁর প্রতিপত্তি বাড়ে। ২০০২-০৩ সালে ওঁর বাড়ির সামনে ব্যাগে করে টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন চাকরিপ্রার্থীরা। শিক্ষা দফতর-সহ একাধিক সরকারি দপ্তরে ওঁর হাত ছিল।’