দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

ভারতের ম্যাচ হলে এই প্রশ্নের প্রয়োজনই পড়ত না। ইডেনে ম্যাচের মাঝেই সঞ্চালক প্রশ্ন করেছিলেন, কারা অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করছেন, আর দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থনেই বা কারা। সে সময় বৃষ্টি বিরতি চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। চিৎকারে আন্দাজ করা গেল, দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থন বেশি। ডেভিড মিলার সেঞ্চুরি করতেই যেন সেটা নিশ্চিত হওয়া গেল। আর দ্বিতীয় পর্বে! গ্যালারি যেন মনে প্রাণে চাইছিল, ২১২ রানের পুঁজি নিয়ে কোনও ম্যাজিক হোক। বেশ কিছু হাফ-চান্স, ইডেনের হতাশা বাড়াল। অস্ট্রেলিয়া তিন উইকেট হারাতেই মেক্সিকান ওয়েভ গ্যালারিতে। শামসি-মহারাজের কোনও ডেলিভারি টার্ন করতেই ম্যাজিকের প্রত্যাশা বাড়ল। কিন্তু পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের রোখা কি এতই সহজ?

তেইশের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ম্যাচ খেলেছিল ভারতের বিরুদ্ধে। চেন্নাইয়ের পিচে মাত্র ১৯৯ রানেই অলআউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ইডেনেও তো হতে পারত! শামসির ডোলিভারিতে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে লেগ বিফোর মার্নাস লাবুশেন। ইডেনে সেমিফাইনালের আগে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের থেকে এই শট আরও ভালো রপ্ত করেছিলেন। বাধ্য় ছাত্রর মতো ক্লাস করেছিলেন। সেই শট খেলতে গিয়েই আউট। ইডেনের প্রত্যাশা বাড়ে। ছাত্র আউট হতেই শিক্ষক ম্যাক্সওয়েল ক্রিজে। প্রথম ডেলিভারি অল্পের জন্য ব্য়াটের কানা ঘেঁসে কিপার ডি’ককের হাতে। যদি ব্যাটে লাগত! কেশব মহারাজের পরের বলেই ফের আবেদন। রিভার্স ßুñপ মিস, ব্যাটেও লাগেনি। রিভিউ নষ্ট হয় দক্ষিণ আফ্রিকার।

কোনও জিনিস মন থেকে চাইলে নাকি পাওয়া যায়? ম্যাক্সির উইকেটটাই যেন দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিল। শামসি পরের ওভারে এসেই ফেরালেন ম্যাক্সিকে। শর্ট বলে পুলের চেষ্টায় বোল্ড। দলীয় ১৩৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ছাত্র-শিক্ষক দুজনই শামসির শিকার! দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে নতুন আশা। যদিও স্টিভ স্মিথের মতো ব্যাটার ক্রিজে থাকায় রাস্তা কঠিন ছিল শামসিদের সামনে। উল্টোদিকে তরুণ ব্যাটার জশ ইংলিশ শট খেলে স্কোর বোর্ড সচল রাখার চেষ্টা করছিলেন। অবশেষে ৩৪তম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্নপূরণ। তখনও ৩৯ রান বাকি অজিদের। জেরাল্ড কোৎজের বলে বড় শট খেলার চেষ্টা স্টিভ স্মিথের। বল অনেক উচুঁতে। কিপার কুইন্টন ডি’কক অনবদ্য ক্যাচে ফেরান স্মিথকে।

তাবরাইজ শামসি-কেশব মহারাজের ওভার শেষ হতেই কিছুটা স্বস্তিতে অজি শিবির। তখন আর ২১ রান প্রয়োজন অস্ট্রেলিয়ার। ১০ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে এক উইকেট মহারাজের। সামসি ১০ ওভারে ৪২ রান দিয়ে ২ উইকেট। ৪০তম ওভারে জশ ইংলিশকে বোল্ড করেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যারাটে কিড। হঠাৎই ফের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে প্রোটিয়ারা। প্রয়োজন ২০ রান, ৬১ বল বাকি। ক্রিজে প্রবেশ অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের।

হাইকোর্ট প্রান্ত থেকে বোলিংয়ে আনা হয় পার্টটাইম স্পিনার এইডেন মার্কর‌্যামকে। অন্য প্রান্তে কোৎজে। বেশকিছু নার্ভাস মুহূর্ত। বাউন্ডারি মেরে চাপ কিছুটা হালকা করেন প্যাট কামিন্স। পরিস্থিতি এমনই স্টার্ক ফ্রি-হিটে বোল্ড হতেও গ্যালারি চিৎকার করে উঠল। রোমহর্ষক পরিস্থিতিতে ভুলেই গিয়েছিল ফ্রি-হিট। এই নিয়ে পঞ্চম বার সেমিফাইনালেই বিদায়। ম্যাচের আগে প্রোটিয়া শিবিরে থিম ছিল, ‘দিস টাইম ফর আফ্রিকা’। অনেকটা কাছে পৌঁছেও সেমিফাইনালের বাধা পেরোতে ব্যর্থ প্রোটিয়ারা। ৩ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় অস্ট্রেলিয়ার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × three =