বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা ময়দানে মেট্রো সংলগ্ন অফিসে

সোমবার সকালে ময়দান মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন অফিস বিল্ডিংয়ে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করলেন এক কর্মী। সপ্তাহের শুরুর দিন। স্বাভাবিক ভাবেই অফিসে তখন চরম ব্যস্ততা। এর মাঝে কানে আসে এক আর্তনাদ। সে আর্তনাদ ওই ভবনের বাকি অফিসের কর্মীদের কানেও পৌঁছায়। আর এই আর্তনাদ লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতেই নজরে আসে প্রসাধনী দ্রব্যে ভরা অফিসের মধ্যেই জ্বলছেন সেই সংস্থারই এক কর্মী। এদিকে সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান। আগুনের থেকে তখন ‘বাবা’কে বাঁচানোর চেষ্টা করছে ছোটো বাচ্চাগুলো। এই ভয়াবহ দৃশ্যে হতবাক হয়ে যান সকলেই।তবে দ্রুত আকস্মিকতার ঘোর কাটিয়ে সহকর্মীরাই জল ঢেলে দ্রুত আগুন নেভান।
এরপরই সামনে আসে এই ঘটনার নেপথ্যে থাকা কারণ নিতান্তই এক ঘরোয়া বিষয়। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অশান্তি। স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হাতেনাতে ধরতে অফিসেই সন্তানদের নিয়ে হাজির হন স্ত্রী। আর ঝগড়া চলাকালীনই সকলের সামনে গায়ে আগুন ধরান স্বামী।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং পুলিশের তরফ থেকে জানা যাচ্ছে, ওই বিল্ডিংয়ে অন্য একটি অফিসে কর্মরত মহিলার সঙ্গে ওই ব্যক্তির সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। বিষয়টি জানতে পেরে যান তাঁর স্ত্রী। তার জেরেই স্বামীর অফিসে সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন তিনি। এরপর অফিসের ডেস্কের সামনেই কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন স্বামী-স্ত্রী। সহকর্মীরা নিতান্ত পারিবারিক বিষয় ভেবে অস্বস্তির জেরেই প্রথমটায় বিশেষ আমল দেননি সহকর্মীরা। এরপরই ঝগড়া চলাকালীনই ওই ব্যক্তি দৌড়ে অন্যত্র চলে যান। প্রত্যেকে ভেবেছিলেন, হয়তো ঝগড়া থেকে রেহাই পেতে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আর্তনাদ শুনতে পান তাঁরা। যতক্ষণে দৌড়ে অফিসের স্টোর রুমের কাছাকাছি বাকি কর্মীরা পৌঁছেছেন, ততক্ষণে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন তিনি। পাশে পড়ে কেরোসিনের খালি বোতল। আগুনের থেকে শেষ মুহূর্তে বাঁচতে জল চেয়ে আর্তনাদ করতে থাকেন। সেই শব্দই সম্ভবত শুনতে পান বাকি অফিসের কর্মীরা। এই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় চলে আসেন তাঁরা। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। আগুনের খবর পেয়ে পৌঁছয় দমকলের দুটি ইঞ্জিন। এদিকে অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তির গায়ে জল ঢেলে আগুন নেভান তাঁর সহকর্মীরা। এরপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়‌। পারিবারিক বিবাদকে এভাবে অফিসে টেনে আনার ঘটনায় অবাক অন্য অফিসের কর্মীরা।
এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, বর্তমানে এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ব্যক্তি। এস‌এসকেএমে গিয়ে ওই ব্যক্তির বয়ান নথিভুক্তও করে পুলিশ। তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। এদিকে হাসপাতাল সূত্রে খবর, ৭০ শতাংশের বেশি পুড়ে গিয়েছে।শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবে এখন‌ও বিপন্মুক্ত নন তিনি। এই ঘটনায় ওই ব্যক্তির এক সহকর্মী জানান, ‘এ ধরনের ঘটনা কোনওদিনও অফিসের মধ্যে ঘটতে পারে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবা যায় না। অত্যন্ত মর্মান্তিক একটি বিষয়। তবে ওই দম্পতির ঝামেলায় প্রভাব পড়ছে তাঁদের সন্তানদের মনেই। বাবা তাদের চোখের সামনেই গায়ে আগুন ধরালেন, শিশুগুলোর কথা ভেবে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − ten =