ভারত সেরা মোহনবাগান। শনিবার গোয়ায় টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতল হুয়ান ফেরান্দোর টিম। প্রথম ৯০ মিনিটের খেলার ফল ২-২ গোলে অমীমাংসিত থাকার পর খেলা গড়ায় অতিক্ত সময়ে। সেখানেও অমীমাংসিত থাকে খেলা। এরপর টাইব্রেকারে বেঙ্গালুরুকে রুখে দেন মোহনবাগানের বিশাল কাইথ। বিশালের ঘাড়ে যেন সত্যিই এদিন বিশাল দায়িত্ব ছিল কলকাতাকে সেরা করার। আর তা তিনি এদিন করেই দেখালেন।
যে কোনও ফাইনাল ম্যাচ মানেই স্নায়ুর যুদ্ধ। টাইব্রেকারে তো আরও বেশি। এই মরসুমে আইএসএলের সেরা কিপার বিশাল কাইথ। এদিনের প্রতি মুহূর্তে তাঁকে দেখা গেছে বিপদের ধার থেকে দলকে তুলে আনতে। প্রথম দুটো কিকে দর্শক ছিলেন। কিন্তু ব্রুনো ব়্যামিরেজে কিকটা বাঁচাতেই সমগ্র ছবিটা বদলায় মুহূর্তের মধ্যে। এরপর পাবলো পেরেস বাইরে মারতেই ভারত সেরা এটিকে মোহনবাগান। নির্ধারিত সময়ে স্কোরলাইন ২-২ থাকার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ জিতল হুয়ান ফেরান্দোর টিম।
শনিবার আইএসএলের ফাইনাল ম্যাচের প্রথমার্ধটা নিজেদেরই দখলে রাখে এটিকে-মোহনবাগান। শুরুতেই গোল তুলে নিতে পারলে চাপে ফেলে দেওয়া যেতে পারে বিপক্ষ টিমকে এই তত্ত্বটা খুব ভালোই জানেন বাগানের স্প্যানিশ কোচ। আর শনিবার সেটাই করে দেখায় তাঁর টিম।
শনিবার গোয়ার ফতোরদায় একটা পরিবর্তন করে এদিন মাঠে নামে এটিকে মোহনবাগান। লিস্টন কোলাসোর জায়গায় আশিক কুরুনিয়ানকে প্রথম থেকেই মাঠে নামান কোচ জুয়ান ফেরান্দো। এদিকে আল্ট্রা ডিফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি নিয়ে এদিন মাঠে নেমেছিল বেঙ্গালুরু। যদিও শুরুতেই ধাক্কা খায়। চোট পেয়ে উঠে যান দলের সেরা স্ট্রাইকার শিবাশক্তি। পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামেন সুনীল ছেত্রী। তবে ৬ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল মোহনবাগানের সামনে। প্রতি আক্রমণে উঠে এসে আশিক কুরুনিয়ান বল বাড়িয়েছিলেন। বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডারদের ভুলে বল পেয়ে গিয়েছিলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। পা ছোঁয়ালেই গোল। কিন্তু পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন পেত্রাতোস।
এরপর ১৩ মিনিটেই এগিয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। পেত্রাতোসের কর্ণার বল ফিস্ট করেন বেঙ্গালুরু গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু। উড়ন্ত বলে হেড করতে ওঠেন আশিক কুরুনিয়ান ও রয় কৃষ্ণা। বল রয় কৃষ্ণার হাতে লাগে। আর তাতেই রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। পেনাল্টি থেকে গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন দিমিত্রি পেত্রাতোস।
ফাইনালের শুরুতেই গোল খেয়ে গেলে চাপে পড়ে যায় বিএফসি। এদিকে পরিবর্ত হিসেবে নামা সুনীল জানেন সামনে থেকে কী ভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়। গোল খেয়ে খানিকটা থমকে যাওয়া টিমকে এগিয়ে দেওয়ার কাজটা শুরু করে দেন সুনীল। এরপর ২৫ মিনিটে সমতা ফেরানোর সুযোগ এসেছিল বেঙ্গালুরুর সামনে। জাভি হার্নান্ডেজের ফ্রিকিক গোলে ঢোকার মুখে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে কর্ণানের বিনিময়ে বাঁচান মোহনাবান গোলকিপার বিশাল কাইথ। মোহনবাগান প্রথমার্দ্ধে ৪০ মিনিট পর্যন্ত খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখলেও শেষ ৫টা মিনিট বিএফসি ম্যাচে ফেরে। আর তাতেই বদলে যায় স্কোরলাইন। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে প্রায় ৫০ মিনিটের মাথায় নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন রয় কৃষ্ণা। তাঁর ভুলে গোল পেয়েছিল মোহনবাগান। এবার আবার তাঁর জন্যই ১-১ করে বিএফসি। লেফটব্যাক শুভাশিস বক্সের মধ্যে ফাউল করেন কৃষ্ণাকে। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টি দেন। সুনীল ছেত্রী ঠাণ্ডা মাথায় গোল করে যান।
এরপর দ্বিতীয়ার্দ্ধের শুরুতেই গ্লেনের পরিবর্তে মাঠে নামেন নামতে। এরপর ৫৫ মিনিটে আশিকের বদলে মাঠে আসেন লিস্টন। ৬০ মিনিটের মাথায় গোল করে বাগানকে এগিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন পেত্রাতোস। কার্যত ফাঁকা গোলে বল ঠেলতে পারেননি। বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শট নেন লিস্টন।গুরপ্রীত তা ভাল সেভ করলেও রিবাউন্ডে বল আসে পেত্রাতোসের কাছে। সেখান থেকেকার্যত ফাঁকা গোলে বল ঠেলে দেওয়ার সুযোগ নষ্ট করেন পেত্রাতোস। এরপর চাপ বাড়াতে থাকে বেঙ্গালুরু। এরপরই ম্যাচের রং বদলায় ৭৮ মিনিটের মাথায়। রয় কৃষ্ণর গোলে এগিয়ে যায় বেঙ্গালুরু। পুরনো দলের বিরুদ্ধে কর্নার থেকে গোল করেন সুযোগসন্ধানী রয়। এর ঠিক চার মিনিট পরই ৮২ মিনিটের মাথায় ফের পেনাল্টি পায় মোহনবাগান।কিয়ানকে বক্সের একেবারে ধারে ফাউল করেন বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডার। এরপর পেনাল্টিতে গুরপ্রীতকে পরাস্ত করে খেলায় সমতা ফেরায় মোহনবাগান।এরপর কাঁটায় -কাঁটায় টক্কর চলে দুই দলের মধ্যে। খেলার একেবারে শেষ মুহূর্তে ৯২ মিনিটে মোহনবাগান প্রায় গোল করেই পেলেছিল তবে দুর্দান্ত শট গোললাইন থেকে বাঁচিয়ে বেঙ্গালুরুকে ম্যাচে রাখেন প্রবীর দাস। ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্দ্ধেও খেলার ফল ২-২ থাকলেও বেঙ্গালুরু বেশ চাপে রাখে এটিকে মোহনবাগানকে। ৯৯ মিনিটে বাগানের বক্সের বাইরে থেকে রোহিত কুমারের শট অল্পের জন্য লক্ষভ্রষ্ট হয়। এরপর অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্দ্ধের প্রথমেই অর্থাৎ ১০৬ মিনিটে গোল করার সুযোগ আসে বেঙ্গালুরুর সামনে। তবে রয় কৃষ্ণর শট একটুর জন্য বারের উপর দিয়ে চলে যায়। এরপরই ১০৭ মিনিটে খেলোয়াড় পরিবর্তন করে মোহনবাগান। হ্যামিলের বদলে মরশুমে প্রথমবার মাঠে নামেন সুমিত রাঠী। খেলোয়াড় পরিবর্তনের ২ মিনিটে মধ্যে সহজ সুযোগ আসে মোহনবাগানের সামনে। তবে তা হেলায় হারান মনবীর।বাঁদিক থেকে পেত্রাতোসের বাড়ানো ক্রস ফাঁকা গোল সামনে পেয়েও মিস করেন মনবীর। সব মিলিয়ে অতিরিক্ত সময়েও অমীমাংসিত থাকে খেলা।