নিজস্ব প্রতিবেদন, দুর্গাপুর: মঙ্গলবারের ভোর রাত। ঘড়িতে তখন ২:১০টা। রাজ্য দমকল বিভাগের সিটি সেন্টার ফায়ার স্টেশনে আর্জেন্ট কল- ‘এডিডিএ অফিসে আগুন লেগেছে।’ ফায়ার স্টেশন থেকে এডিডিএ সদর দপ্তরের দূরত্ব মেরেকেটে ১১০ মিটার। ভোর রাতের ফাঁকা রাস্তায় সেখানে দমকলের গাড়ির সময় লাগে বড়জোর আড়াই মিনিট। দমকলের অফিসার, কর্মীরা আগুনের লেলিহান শিখা, ঝাঁঝ দেখে হতভম্ভ। ফায়ার অফিসার সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘যে অবস্থায় আমরা এসে দেখলাম, তাতে বোঝাই গেল এই আগুন কম করে দু’ঘণ্টা ধরে জ্বলছে। তাই, ছড়িয়েছে গোটা দপ্তর জুড়ে।’
রাজ্য সরকারের আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার (এডিডিএ) সদর দপ্তর শহরের নগর নিগমের ঠিক উলটো দিকে। সরকারিভাবে এডিডিএর সদ্য নিযুক্ত মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর বললেন, ‘আমরা যা জানতে পারলাম, আগুন ওই সময়েই লেগেছে। তবে, এখনই আমরা অতটা বিশ্লেষণ করিনি। আমরা এর ফরেনসিক তদন্ত করাব। তাতে, অনেকটা বোঝা যাবে। এ ঘটনার আলাদা করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তও দরকার।’
আগুন লাগার কথা শোনা মাত্র সটান সিটি সেন্টারের মুখ্য কার্যালয়ে আসানসোল থেকে ছুটে আসেন এডিডিএর চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্য কার্যনির্বাহী আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর, সহকারি কার্যনির্বাহী অভিজিৎ সামন্ত, মানস পান্ডা সহ দপ্তরের সব কর্মী, আধিকারিক ও বাস্তুকার।
‘আগুন তো তার মতো দাপিয়ে এডিডিএর খাসমহল জুড়ে যাকে বলে ‘লঙ্কা কাণ্ড’বাঁধিয়ে ছেড়েছে। দপ্তরের প্রায় সবকিছুই পুড়ে ছাই। আর কিছুই নাই। আমাদের গোটা অফিসটাই এখন বীরভানপুরের শ্মশানের চুল্লির মতো লাগছে’ বলে আক্ষেপ এক এডিডিএ কর্মীর। শুধু আক্ষেপই নয়, এডিডিএর কর্মচারীরা প্রশ্ন তুলছেন, দপ্তরে অগ্নিনির্বাপণের জন্য লাগানো ফায়ার এক্সটিংগুইশার কেন কাজ করল না? দমকলের অনুমান মোতাবেক আগুন যদি অন্তত দু’ঘণ্টা আগেও লেগে থাকে, কর্তব্যরত দু’জন নিরাপত্তারক্ষীর সেই আগুন টের পেতে এত বিলম্ব হল কেন? নিরাপত্তারক্ষীদের একজনর দাবি, ‘আমরা রাত দেড়টায় আগুন দেখামাত্র ওপর মহলে জানিয়ে দিই।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে রাজ্য দমকলের বিভাগীয় আধিকারিক এস মজুমদার বলেন, ‘এখানে আগুন নেভাতে এসে আমাদের সবচেয়ে বেশি জলের জোগানের সমস্যায় পড়তে হয়। এখানে আশপাশে কোনও সোর্স নেই। পাশের একটি আবাসন থেকে ইঞ্জিন দিয়ে জল টেনে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়।’ এদিন আগুন নেভাতে গিয়ে এক দমকল কর্মী কুণ্ডলী পাকানো ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
এদিকে, এডিডিএতে আগুন লাগার পর সেখানে এসে পৌঁছন দুর্গাপুরের (পশ্চিম) বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই। তিনি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করে বলেন, ‘লাখ লাখ জমি, বাড়ির নথি এভাবে ছাই হয়ে গেল স্রেফ এডিডিএর উদাসীনতায়। ব্যাপারটা আমরা অত সহজ ভাবে নিচ্ছি না। দোষীদের খুঁজে বের করতেই হবে।’ বিজেপি নেতার সুরে সুর মিলিয়ে সিপিএমের নেতা সৌরভ দত্ত সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘এডিডিএ ভস্মীভূত হওয়াটা কি নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি আদালতের ভয়ে কোনও দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা?’
ঘটনাস্থলে ঠায় সাত ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা এডিডিএর চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘যে বা যারা সমস্ত নথি পুড়ে গিয়েছে বলে ভয় পাচ্ছেন, তাদের জানিয়ে রাখি, প্রায় সমস্ত নথিরই কপি করে অন্যত্র রাখা আছে। আছে নগরোন্নয়ন দপ্তরের হেপাজতেও। সময়ে সবই পাওয়া যাবে।’