প্রত্যাশিত ফলেই বিজেপি ফিরছে ত্রিপুরা ও নাগাল্যান্ডে, ত্রিশঙ্কু মেঘালয়ে ফুটল ঘাসফুল

উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রত্যাশিত, চমকহীন। কারণ আপাতদৃষ্টিতে তিনটি রাজ্য ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডে নতুন কিছুই হয়নি।

ত্রিপুরায় গত বিধানসভা নির্বাচনের মতোই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে শাসকদল বিজেপি। নাগাল্যান্ডে গত বিধানসভা ভোটের পর জোট সরকার গড়েছিল স্থানীয় দল এনডিপিপি এবং বিজেপি। এ বারও দুই দলের প্রাপ্ত আসন একত্রে সরকার গঠনের ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে গিয়েছে। মেঘালয়ে গত কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচনের ধারা অব্যাহত রেখে এ বছর আবার তৈরি হয়েছে ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি।

বড় কোনও বদলের আশা বা আশঙ্কা কোনওটাই ছিল না বুথফেরত সমীক্ষায়। ওয়াকিবহালরা এমনও বলেছিলেন যে, ২০১৮ সালের মতোই ২০২৩ সালেও বিজেপিই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে ত্রিপুরা এবং নাগাল্যান্ডে। সঙ্গী দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে তারা ক্ষমতার দখল নেবে। বৃহস্পতিবার ভোটের ফল প্রকাশের পর সেই চেনা উত্তর মিলতে চলেছে ঠিকই। তবে চেনা সমীকরণ সামান্য বদলেও গিয়েছে।

প্রত্যাশামতোই ত্রিপুরায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি এবং আইপিএফটির জোট। তাদের মোট প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা ৩৩। সরকার গড়তে ৩১টি আসন দখলের দরকার ছিল। জোটবদ্ধ বিজেপি তার থেকেও দু’টি আসন বেশি পেয়েছে। কিন্তু গত বার এই বিজেপিই ত্রিপুরার ৬০টি আসনের মধ্যে ৪৪টিতে জিতে রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছিল। বাকি ১৬টি পেয়েছিল প্রাক্তন শাসক বামফ্রন্ট। কংগ্রেস, তৃণমূল সে বার ভোটে খাতাই খুলতে পারেনি। এ বারের নির্বাচনে বামফ্রন্টের ভোট আরও কমেছে। তৃণমূল এ বারও খাতা খুলতে পারেনি। দেখা যাচ্ছে, বিজেপির ঝুলিতে যে ভোট যাওয়ার কথা ছিল, ওই ভোট পেয়েছে রাজার দল তিপ্রা মথা। প্রথম বার বিধানসভা নির্বাচনে লড়েই ১৩টি বিধানসভা আসন জয় করেছে তারা। উঠে এসেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে। মূলত উপজাতি এলাকার সবক’টি আসনই জিতেছে রাজা প্রদ্যোৎ বিক্রম মাণিক্য দেববর্মণের দল।

ত্রিপুরায় ১ শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছে তৃণমূল। গত দু’টি বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দিয়ে আসা তৃণমূল ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ত্রিপুরায় মনোনিবেশ করেছে। ত্রিপুরার পুরভোটে আগরতলায় প্রাপ্ত ভোটের শতাংশের হারে বামদলগুলিকে পিছনে ফেলে দিয়েছিল তারা। সেই তৃণমূল বিধানসভা ভোটে গোটা রাজ্যে ১ শতাংশেরও কম ভোট পেল কী করে, তা-ও ভাবার বিষয়!

নাগাল্যান্ডে গত বছর সরকার গড়েছিল এনডিপিপি এবং বিজেপির জোট। যদিও ৬০টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছিল যথাক্রমে ১৮ এবং ১২টি আসন। এনপিএফ ২৬টি আসন পেয়েও সরকার গড়তে পারেনি। বৃহস্পতিবারের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, সেই এনপিএফের প্রাপ্ত আসন নেমে এসেছে দু’টিতে। তবে গত বার বিজেপির সমর্থন পেয়ে সরকার গড়েছিল যে এনডিপিপি, তাদের প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা এক লাফে পৌঁছেছে ২৪-এ। অর্থাৎ, গত পাঁচ বছরের শাসকদলকেই আবার বেছে নিয়েছেন মানুষ।

এদিকে বৃহস্পতিবার এই ফলাফল প্রকাশিত হতেই ভোটারদের ধন্যবাদ জানান নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। ফলাফলের কৃতিত্ব দিয়েছেন বিজেপি কার্যকর্তাদের, যাঁরা এতদিন মাটি কামড়ে নির্বাচনের কাজ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘আমি ত্রিপুরার কার্যকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা তৃণমূল স্তর থেকে দারুণ পরিশ্রম করেছে। ডবল ইঞ্জিন সরকারের সুফল পাওয়া গেল আজ। উন্নয়ন ও স্থায়িত্বের জন্য ভোট হয়েছে। মেঘালয়ে যাঁরা আমাদের সমর্থন করেছেন তাঁদেরও ধন্যবাদ। আমরা সকলের জন্য কাজ করব। উত্তর-পূর্ব ভারতের আরও প্রগতিই আমাদের লক্ষ্য।’

এদিন অমিত শাহও (Amit Shah)উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের ফলাফলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এই দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ বলছেন তিনি। বাংলায় তাঁর টুইট, উন্নয়নমুখী রাজনীতির পক্ষে ভোট দিয়েছেন সকলে। এই জয় উন্নয়নের জয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − thirteen =