‘মেয়েটার যেন জামিন হয়ে যায়’, উপরওয়ালার কাছে এমনটাই প্রার্থনা করতে শোনা গিয়েছিল বীরভূমরে দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে। তবে সে কথা শুনলেন না উপরওয়ালা।বৃহস্পতিবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে ফের খারিজ হল সুকন্যা মণ্ডলের জামিনের আবেদন। একইসঙ্গে কার্যত স্থগিত হয়ে যায় অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের আবেদনের শুনানিও। সোমবার থেকে গরমের ছুটি পড়ে যাওয়ার কারণে আগামী এক মাসে আর এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। ফলে জুন মাসও কার্যত তিহাড় জেলেই কাটাতে হবে অনুব্রত ও সুকন্যাকে।এ যেন একেবারে জোড়া ধাক্কা বীরভূমের মণ্ডল পরিবারের জন্য।
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সুকন্যা মণ্ডলের আইনজীবী অমিত কুমারও দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে আবেদন করেন জামিনের জন্য। এই মামলার শুনানি চলাকালীন ইডি-র আইনজীবী আদালতে জানায়, অনুব্রত মণ্ডলের হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি জানিয়েছেন, সুকন্যা ব্যবসার দেখাশোনা করতেন এবং তাঁকেও নির্দেশ দিতেন। একইসঙ্গে ইডি-র আইনজীবী এও জানান, সুকন্যা শিক্ষিতা। তিনি কোনও বিষয় না জেনে সই করেছেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এর আগে ইডি-র আইনজীবী সুকন্যার বিরুদ্ধে একাধিকবার ‘প্রভাবশালী তত্ত্ব’ সামনে এনেছেন। এরই পাল্টা যুক্তি হিসেবে সুকন্যা মণ্ডলের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, গোরু পাচারকাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএসএফ আধিকারিক সতীশ কুমার। তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে ১২ কোটি টাকার হদিশ পাওয়া গেলেও কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি তা নিয়েও। শুধু তাই নয়, সিবিআই-এর চার্জশিটে নাম রয়েছে সতীশের কিছু আত্মীরও। সেক্ষেত্রে কি বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে বলেই কি সুকন্যা মণ্ডলের গ্রেপ্তারি তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সুকন্যার আইনজীবী। এরই প্রত্যুত্তরে ইডি-র তরফ থেকে জানানো হয়, তদন্তের স্বার্থে কাকে গ্রেপ্তার করা হবে তা নির্দিষ্ট করার অধিকার ইডি-র রয়েছে। এরই মাঝে সুকন্যা অসুস্থ এবং তাঁর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন রয়েছে বলেও আবেদনে জানান তাঁর আইনজীবী অমিত কুমার।তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।
উল্লেখ্য, জামিন মামলা অন্য বিচারকের এজলাসে হোক, এই মর্মে এদিনই রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে আবেদন জানান অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী। বিচারক রঘুবীর সিংয়ের এজলাসে রয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের জামিন সংক্রান্ত মামলা। অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী মুদিত জৈন এই মামলা অন্য বিচারকের এজলাসে সরানোর জন্য আবেদন করেন। এই মর্মে তিনি এদিন এক হলফনামাও জমা দেন।
এদিকে দিল্লি হাইকোর্টেও জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। বিচারপতি দীনেশ কুমার শর্মার ব্যস্ততার কারণে পিছিয়ে দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্টে অনুব্রতর জামিন মামলার শুনানি। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হতে পারে ৯ জুন। প্রসঙ্গত, গোরু পাচার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল এবং সুকন্যা মণ্ডল। তাঁরা আপাতত তিহাড় জেলে।