অনুব্রত-কন্যা সুকন্যার জামিন মামলার রায়দান ১ জুন। শুক্রবার এই নির্দেশ দেন দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের বিচারক রঘুবীর সিং। এদিন মামলার শুনানি শেষে রায়দান রিজার্ভ রাখেন। এদিকে এদিন ইডির তরফে আদালতে বলা হয়, মণীশ কোঠারি তাঁর বয়ানে জানিয়েছেন, অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মণ্ডলই সমস্ত ব্যবসা দেখতেন। একইসঙ্গে তাঁকে নির্দেশও দিতেন বলে বয়ানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়। শুধু তাই নয়, এদিন আদালতে ইডির আইনজীবী জানান, অনুব্রত মণ্ডল পড়াশোনা জানেন না। তাঁর পক্ষে হিসাবরক্ষকের সঙ্গে কথা বলে এত টাকা হেরফের করা সম্ভব না। এক্ষেত্রে সুকন্যার ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়ে এদিন। ইডির আইনজীবী নীতেশ রানা আদালতে জানান, গরু পাচার কাণ্ডে অনুব্রত মণ্ডল যে বিপুল অঙ্কের টাকা তছরূপ করেছেন, সেই তছরূপ প্রক্রিয়ায় মাস্টারমাইন্ড ছিলেন দু’জন। একজন অনুব্রতর হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারি এবং দ্বিতীয়জন অনুব্রতর কন্যা সুকন্যা মণ্ডল। যদিও এই সব অভিযোগ মানতে চাননি সুকন্যার আইনজীবী অমিত কুমার। আদালতে তাঁর সওয়াল ছিল, গরু পাচার মামলায় সুকন্যাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করেছে ইডি। তাই তাঁকে আর হেপাজতে রাখার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া একই মামলায় অন্যান্য কয়েকজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার না করেই জামিন দেওয়া হয়েছে। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। এই প্রসঙ্গে সুকন্যার আইনজীবী একইসঙ্গে এদিন আদালতে জানান.বিএসএফ আধিকারিক সতীশ কুমারের স্ত্রী তানিয়া সান্যালের কথা। সিবিআই চার্জশিটে নাম থাকার পরও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পাশাপাশি সুকন্যার আইনজীবী এও জানান, সুকন্যার কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে। চলতি মাসেই অস্ত্রোপচারের কথা রয়েছে। তাই জামিন দেওয়া হোক। এরই প্রত্যুত্তরে ইডির আইনজীবী নীতেশ রানা সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সুকন্যা। গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এরপরই ইডির তরফে এদিন দাবি করা হয়, সুকন্যা মণ্ডল একজন শিক্ষিত, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তিনি কিছু না জেনে কোনও কাগজে সই করেছেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
শুধু তাই নয়, সুকন্যা মণ্ডল সম্পর্কে এর আগেও একাধিকবার প্রভাবশালী তত্ত্ব সামনে আনে ইডি। তাঁর বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগও আনা হয়। বলা হয়, বিপুল সম্পত্তির মালকিন সুকন্যা। সরকারি চাকরি করতেন। রাইস মিল, জমিজমা অনেক সম্পত্তিরই খোঁজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। যদিও সুকন্যা বারবারই দাবি করেছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এদিকে ইডি-র দাবি, দোষ প্রমাণ হলে কঠিন শাস্তি হবে। তাই জামিন দেওয়া উচিত হবে না। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রঘুবীর সিং ১ জুলাই রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেপ্তারের ৯ মাস পর ইডির হাতে গ্রেপ্তার হন তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল। এরপর তাঁক আদালতে তোলা হলে প্রথমে ৩ দিনের ইডি হেপাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। তিন দিনের সেই মেয়াদ শেষ হবার পর আপাতত জেল হেপাজতে রয়েছেন সুকন্যা। এদিকে ইডি সূত্রে খবর, বারংবার জেরার মুখে পড়ে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলতেন সুকন্যা। অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তরই তিনি এড়িয়ে যেতেন। সুকন্যার দাবি ছিল, বাবার আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না। তাঁর মুখে একটাই কথা ছিল, বাবার সঙ্গে দেখা করতে চাই ! এখন বাবা মেয়ে দু’ জনেই রয়েছেন তিহাড় জেলে। এদিকে গত বুধবারই অনুব্রত এবং সুকন্যা মণ্ডলের নামে থাকা যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা টাকাও ফ্রিজ করে ইডি৷
এদিকে গরু পাচার মামলায় আরও নতুন তথ্য পেল সিবিআই। আর সেই তথ্যকে সামনে রেখেই অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সহেগল হোসেনকে জেরার প্রস্তুতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শিবিরে। সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহে তিহার সংশোধনাগারে গিয়ে সহেগল হোসনকে জেরা করবে সিবিআই। ইতিমধ্যে সহেগলকে জেরার অনুমতি দিয়েছে আদালত। সম্প্রতি গরু পাচার মামলায় শুল্ক দফতরের কয়েকজন আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকেরা। সেই জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে গরু পাচার মামলার একাধিক নতুন তথ্য উঠে আসে। প্রসঙ্গত, গরু পাচার মামলার এফআইআরে বিএসএফ ও শুল্ক দপ্তরের একাংশের যোগ সাজসের মদতে পাচার চলেছে বলে উল্লেখ রয়েছে। তলব করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। বিএসএফ কম্যান্ড্যান্ট সতীশ কুমার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দিয়েছে সিবিআই। এই ইস্যুতে শুল্ক দপ্তরের বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। আর তখনই হাতে আসে নয়া তথ্য। সূত্রের দাবি, গরু পাচার মামলায় বীরভূমকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনুব্রত মণ্ডল সাহায্য করেছে। আর পাচারকারীদের সঙ্গে অনুব্রতর যোগাযোগে মাধ্যম ছিলেন সহেগল। এনামূল হকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখা, তার সহযোগী আব্দুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সমস্তটাই করতেন সহেগল। এমনকি আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিও অনুব্রতর নির্দেশে সহেগল দেখতেন। এই সহেগলকে ফের জেরা করতে চাইছে সিবিআই।