গোরু পাচার (Cow smuggling) মামলায় দু’দফায় সাতদিন করে মোট ১৪ দিন সিবিআই (CBI) হেপাজতে থাকার পর শুক্রবার আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করা হয় অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে। এদিন সিবিআই আদালতে তাকে আবারও ৭ দিনের জন্য নিজেদের হেপাজতের আবেদন জানায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সায়গলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা সিবিআই হেপাজতের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ১৪ দিন হেপাজতে নিয়ে জেরা করে সিবিআই কি পেয়েছে, তা তারা স্পষ্ট করে জানায়নি। আমার মক্কেলের এক সন্তান কিছু দিন আগে দুর্ঘটনা মারা গিয়েছে। ১০ বছরের আরও এক সন্তান বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তার মেডিক্যাল সার্টিফিকেটও জমা দেওয়া হয়েছে। তাই মানবিক কারণে তার জামিনের আবেদন করছি। সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার আবারও সায়গলের প্রভাবশালী তত্ত্ব তুলে তার জামিনের বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী সায়গলের জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেপাজতর নির্দেশ দেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ৮ জুলাই। গত ১০ জুন সায়গলকে প্রথমবার আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে পেশ করা হয়। সেদিন সায়গলকে ৭ দিনের সিবিআই হেপাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর গত ১৭ জুন ফের তাকে আসানসোল সিবিআই আদালতে পেশ করা হয়। সেদিনও বিচারক জামিন নাকচ করে ৭ দিনের সিবিআই হেপাজতের নির্দেশ দেন। সেইমত এদিন শুক্রবার, সায়গল হোসেনকে কলকাতার নিজাম প্যালেস থেকে সিবিআই আধিকারিকরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে আসানসোল সিবিআই আদালতে হাজির করেন। এদিন সায়গলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা তাকে গ্রেপ্তার করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে সওয়াল করেছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম সায়গলকে গ্রেপ্তার ও পিসি আইনের ১৭/এ ধারায় মামলা দায়ের করা। আইনজীবী দাবি করেন, সায়গল রাজ্য সরকারের কর্মী। তাই এক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি প্রয়োজন, যা নেওয়া হয়নি, তা বাধ্যতামূলক ছিল। জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। রায়ে বিচারক বলেন, পরবর্তীকালে এই মামলায় চার্জশিট দেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে এর আইনি ব্যাখ্যা দিতে হবে। এছাড়াও তার প্রচুর আয় বহির্ভূত সম্পত্তি রয়েছে বলে দাবি করা হলেও, সিবিআই বাড়ির একটা ইলেকট্রিক বিল ছাড়া কিছুই আদালতে জমা দেয়নি। অন্য একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, সায়গল হোসেনের সঙ্গে এনামুল হকের মোবাইলে কথা বলার সিডিআর বা কল ডিটেইলস রেকর্ড সিবিআই পেয়েছে। এছাড়াও সায়গল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের জমি সহ কি সম্পত্তি রয়েছে, তা জানতে সিবিআই ভূমি রাজস্ব দপ্তরে মেল করেছিল। তার উত্তরও দপ্তর সিবিআইকে পাঠিয়েছে। এদিন সিবিআইয়ের তরফে সিডিআর ও মেল রিপোর্ট আকারে আদালতে জমা দেওয়া হয়।
আপাততঃ সায়গল আসানসোলের বিশেষ সংশোধনাগারে থাকবে। উল্লেখ্য, গোরু পাচার মামলায় তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। তার কাছ থেকে গোরু পাচার মামলার অনেক তথ্য পাওয়া যাবে, এমনটাই দাবি সিবিআই-এর। সিবিআই তাকে একাধিকবার নিজাম প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সায়গলের বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। শুক্রবার তাকে ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিল আদালত।