সন্দেশখালি কাটায় বিদ্ধ বিজেপি। আবারও একটি ভিডিও ভাইরাল হলো সন্দেশখালি নিয়ে (যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি একদিন)। লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন সন্দেশখালি নিয়ে আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়াতে বিপাকে বিজেপি। একের পর এক ভিডিও ও বক্তব্য প্রকাশ্যে আসায় বিপাকে বিজেপি। ভাইরাল ওই ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর বিস্ফোরক দাবি করেছেন বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রর। সন্দেশখালির আন্দোলনকারী হিসেবে যাদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাদের পরিচয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন তিনি। আন্দোলনকারী মাম্পি দাসও প্রশ্ন তুললেন।
নতুন যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, তাতে রেখা-সহ তিন মহিলাকে দেখা গিয়েছে। এক মহিলাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা সন্দেশখালির আন্দোলনে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ছিলাম আমরা সবাই। আমাদের ছাড়া রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে কারা গেল? আমরা তাহলে কারা?’ আরেক মহিলা বলেন, ‘অনুপ দাস নিয়ে গিয়েছিল বলে খবর পেয়েছি। ভিতরে ভিতরে তৃণমূল নেতা শিবু হাজরার কাছ থেকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে নিতেন। ওর সঙ্গে একজন গিয়েছিলেন, তাহলে কি ওই মহিলা তৃণমূলের লোক, উপরে উপরে বিজেপি করেন?’ ওই ভিডিওয় রেখাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা নির্যাতিতা মায়েরা যদি সন্দেশখালিতে পড়ে আছি, তাহলে আমাদের হয়ে কারা গিয়েছে, তা জানা প্রয়োজন। আর রাষ্ট্রপতি ম্যাডামের কাছে গিয়েছেন যে, আমাদের কিছু জানিয়েছিলেন? আমরা আন্দোলনের মুখ, আমাদের না নিয়ে গিয়ে অন্যদের সাজিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস কে দিয়েছে?’ আন্দোলনকারী মহিলাদের দাবি, সন্দেশখালির নির্যাতিতা বলে কিছু জনকে রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তারা। আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, ‘তাহলে আমরা কারা?’
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ভিডিও-য় রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া মহিলাদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বিজেপি প্রার্থী রেখা। প্রধানমন্ত্রী যখন বারাসাতে এসেছিলেন, সেই সময় তার সঙ্গে দেখা করেন রেখা এবং অন্যরা। এর পর পরই দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যান কিছু মহিলারা, যারা নিজেদের সন্দেশখালির আন্দোলনকারী বলে পরিচয় দেন। সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সন্দেশখালির রেখা এবং অন্যরা। তাদের দাবি, যারা আন্দোলনে সামিলই ছিলেন না, তাদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন। এক মহিলা বিজেপি নেত্রীর নামও উঠে আসছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এমনকী বিজেপি নেতা অনুপ দাস একসময় শিবুর ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন তারা।
সম্প্রতি সন্দেশখালি থেকে একটি ভিডিও সামনে আসে, যেখানে বিজেপি-র অঞ্চল সভাপতিকে বলতে শোনা যায়, সন্দেশখালির গোটা ঘটনাই পরিকল্পিত এবং সাজানো। মিথ্যে ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়। শেখ শাহজাহানের মতো প্রভাবশালীদের জেলে পুরতে শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর সহযোগীই গোটা পরিকল্পনা করেন এবং সেই মতো টাকা জোগান বলে ভিডিও-য় দাবি করতে শোনা যায় বিজেপি-র ওই অঞ্চল সভাপতিকে। এবার আরও এক ভিডিও সামনে এল। এ নিয়ে সন্দেশখালিরতৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাত বলেন, ‘গোটাটাই নাটক ছিল। কখনও রেখাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কখনও অন্যদের নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। এই জঘন্য ষড়যন্ত্রে সন্দেশখালির মহিলাদের যে অসম্মান হয়েছে, গোটা বাংলার অসম্মান হয়েছে, বিজেপি–র মতো রাজনৈতিক দল এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। এই জঘন্য, নির্লজ্জ রাজনীতি গোটা দেশে কায়েম করতে চায় বিজেপি।’
এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘যাদের সামনে আনা হয়েছে তারাই কি শুধু ভুক্তভোগী? যারা মুখ খুলছেন না, যারা প্রকাশ্যে আসছেন না, তাঁরা কি ভুক্তভোগী নন? তারা রাষ্ট্রপতির সামনে বলেন। সন্দেশখালিতে পাড়ায় পাড়ায় ভুক্তভোগী। ১০ বছর ধরে এই ঘটনা চলছে। যারা একথা বলছেন, নির্বাচনের পর বুঝতে পারবেন যখন সকলে রাস্তায় নামবেন।’
শুভেন্দুর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার দাবি
সন্দেশখালিকাণ্ডে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের আর্জি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল তৃণমূল কংগ্রেস। চিঠি দিল শাসকদল। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে নির্বাচন সদনে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আর্জি জানিয়ে চিঠি দেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ‘সন্দেশখালিকাণ্ডে নতুন করে যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তাতে যাদের দেখা গিয়েছে তাঁদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।’
নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশ ঠোকার পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে ভাইরাল ভিডিওতে প্রমাণ বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে, ভোটারদের কাছে তৃণমূল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে সন্দেশখালি নিয়ে ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল বিজেপি নেতৃত্ব। ২০০০ টাকা, ৩০০০ টাকার বিনিময়ে মহিলাদের অভিযোগ করানো হয়েছিল। গোটা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করেছিলেন শুভেন্দু। তাই তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে পদক্ষেপ করার জন্য কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে গিয়ে সন্দেশখালি নিয়ে মিথ্যা বলে তৃণমূল কংগ্রেসের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ক্ষমাপ্রার্থনারও দাবি জানিয়েছেন সাগরিকা। তাঁর কথায়, ‘বাংলায় প্রচারে গিয়ে সন্দেশখালি নিয়ে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত কররার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দুজনের উচিত হাতজোড় করে মিথ্যাচারের জন্য ক্ষমা চাওয়া।’