রাজ্যের আরও এক ছাত্রের রহস্যমৃত্যু, সিবিআই তদন্ত চাইল পরিবার

এবার রাজ্যে আরও এক ছাত্রের মৃত্যুতে ঘনীভূত হল রহস্য। শুধু তাই নয়, এই ঘটনাতেও পুলিশি তদন্তে ত্রুটির অভিযোগ তুলে মৃতের বাড়ির লোকজন মামলাও করেন হাইকোর্টে। আদালত সূত্রে খবর, তাঁরা ওই মামলায় সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন।
আদালত সূত্রে খবর, এই ঘটনা ঘটেছেল মুর্শিদাবাদের নওদা এলাকার রহমানিয়া মিশনে। সেখানকার ক্লাস সিক্সের এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় স্কুলের হস্টেলে। গত ১ মে হস্টেলে ঘরের জানলার রড থেকে গলায় গামছার ফাঁস বাঁধা অবস্থায় ১১ বছরের ওই বালকের দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের দাবি, ওই ছাত্র গলায় গামছার ফাঁস বেঁধে ঝুলে পড়ে। তার বাড়ির লোকজনকে খবর দেওয়া হয় সে দিন সন্ধ্যায়। ওই ঘটনায় পুলিশি তদন্তে সন্তুষ্ট না-হয়ে পরিবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। বিচারপতি অমৃতা সিনহার আদালতে ওই মামলার শুনানিতে মৃত ছাত্রের পরিবারের আইনজীবী নীলাদ্রিশেখর ঘোষ জানান, পরিবার খুনের অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ আত্মহত্যার কথা জানিয়েছে। খুনের অভিযোগের কোনও তদন্তই হয়নি। মৃতের পরিবারের আইনজীবীর বক্তব্য, মৃতের শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, তার উল্লেখও রয়েছে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে। এর পরেও চিকিৎসক ওই ঘটনা আত্মহত্যা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তাঁর রিপোর্টে। এ দিন শুনানি শেষে বিচারপতি সিনহা বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, ‘১১ বছরের ছেলে সুইসাইড করেছে! এটা একটু অস্বাভাবিক না?’ তদন্তে পুলিশ কী কী পেয়েছে, আদালত সেটা জানতে চায়। রাজ্যে সরকারের কৌঁসুলি জানান, হস্টেল থেকে পুলিশ সিসিটিভি ক্যামেরার কিছু ফুটেজ সংগ্রহ করেছে, সে সব কাজে লাগানো হচ্ছে তদন্তে। এদিকে মৃতের পরিবারের আইনজীবী বলেন, ‘মৃতের দেহে ক্ষতচিহ্ন দেখে এবং আর কিছু তথ্য পেয়ে থানায় আমরা খুনের অভিযোগ দায়ের করি। সেই সব তথ্য থানাকে দেওয়ার আগেই তারা বিষয়টি আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। পুলিশ সত্যিই কতটা নিরপেক্ষ তদন্ত করবে, সেই ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।’
এরপরই বিচারপতি সিনহা নির্দেশ দেন, সিসিটিভি ক্যামেরার ওই সব ফুটেজ পুলিশ মৃতের পরিবারের আইনজীবী ও রাজ্য সরকারের কৌঁসুলিকে দেখানোর। তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট পরবর্তী শুনানি, ১৬ জুলাই আদালতে জমা দিতে হবে পুলিশকে। তবে ঘটনার দিন স্কুলের হস্টেলের সিসিটিভি ক্যামেরার যে ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় মৃতের পরিবারের তরফে। সেই ফুটেজের মাঝখানের কয়েক সেকেন্ড ডিলিট করে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা মৃতের পরিবারের আইনজীবীর। পরিবার চাইছে, সম্পূর্ণ ফুটেজ আদালতের সামনে আসুক।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, আইআইটি খড়্গপুরের ছাত্র, অসমের তিনসুকিয়ার ফয়জান আহমেদের দেহ হস্টেল থেকে উদ্ধারের ঘটনাকে প্রথমে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ফয়জানের দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের পরে মাথায় ভারী কিছুর আঘাতে মৃত্যুর কথা জানান মেডিকোলিগ্যাল এক্সপার্ট অজয় গুপ্ত। যদিও তাঁর ওই অভিমতকে রাজ্য পুলিশের একাংশ মিথ্যে প্রমাণ করতে চেষ্টা করছে বলে পাল্টা অভিযোগ ফয়জানের পরিবারের আইনজীবীদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − three =