ফের ধস খনি অঞ্চল হরিপুরে, এবার স্কুলে, আতঙ্কে পড়ুয়ারা

নিজস্ব প্রতিবেদন, পাণ্ডবেশ্বর: নিম্নচাপের জেরে বিগত কয়েকদিন ধরেই খনি অঞ্চল তথা দেশজুড়ে চলছে প্রবল বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাত হলেই খনি অঞ্চলে প্রকট হয়ে ওঠে ধসের আতঙ্ক। কয়লা খনি অঞ্চল অণ্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, লাউদোহার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরই দেখা যায় ধসের ঘটনা। বিগত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের জেরে এবারের ধসের ঘটনা ঘটল পাণ্ডবেশ্বর থানার হরিপুর হাটের ঠিক পিছনেই অবস্থিত একটি সরকারি হরিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা সামনে আসে প্রাঙ্গণে খেলতে আসা কিছু ছেলেরা এই খবর স্থানীয় পঞ্চায়েতকে জানালে।
শুক্রবার সকালেই স্কুল প্রাঙ্গণে ধস বড় আকারের একটা গর্তে পরিণত হয়। স্বাভাবিক ভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। হরিপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গোপীনাথ নাগ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানান, সৌভাগ্যক্রমে স্কুল চলাকালীন এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি, কেননা এই স্কুলে ছোট বড় ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে, আর এই স্কুল প্রাঙ্গণেই তারা খেলাধুলা করে সেই মুহূর্তে এই ঘটনা ঘটলে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। পাশাপাশি তিনি এও অভিযোগ করেন, এক সময়ে এই এলাকায় পুরনো কোনও খনি ছিল, সঠিক ভাবে সেখানে বালি ভরাট না করার কারণেই বৃষ্টি হলেই ধসের আকার নেয়।
গোপীনাথবাবু জানান, ইসিএল আধিকারিকদের গতকালই খবর দেওয়া হয়েছে এই ঘটনার বিষয়ে। কিন্তু বেলা সাড়ে ন’টা পর্যন্ত কোনও আধিকারিক ঘটনাস্থলে পৌঁছননি। পঞ্চায়েত নিজস্ব উদ্যোগে এই ঘটনাস্থল ব্যারিকেট দিয়ে ঘিরে ফেলে যাতে করে কোনও মানুষ বা পশু ওই ধস কবলিত এলাকার দিকে যেতে না পারে। পৌনে দশটা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন হরিপুর কোলিয়ারির এজেন্ট, একে একে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পাণ্ডবেশ্বরের বিডিও বৃষ্টি হাজরা, স্থানীয় বাসিন্দা তথা জামুড়িয়ার তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিং।
বিডিও জানান, যেহেতু পরীক্ষা চলছে, তাই এদিনের এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্যই বিদ্যালয় বন্ধ থাকছে না। তবে নিরাপত্তার জন্য ঘটনাস্থলে রয়েছে পুলিশ, পঞ্চায়েত ও ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন দপ্তরের বেশ কয়েকজন আধিকারিক। জামুড়িয়ার তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিং দাবি করেন, ইসিএল এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় কয়লা উত্তোলনের জন্য খনি তৈরি করেছে, তবে কয়লা উত্তোলনের পর সঠিক ভাবে সেই খনিমুখ ভালো ভাবে বালি দিয়ে ভরাট না করার কারণেই আজ এই ধসের ঘটনা ঘটছে আকছার।
তিনি জানান, ইসিএল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যদি সত্যিই বিপজ্জনক পায়, তা হলে ভবিষ্যতে এই স্কুল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলে এসে হরিপুর কোলিয়ারির এজেন্ট পঙ্কজ কুমার ঝাঁ জানান, মাটি দিয়ে ভরাট করার কাজ শুরু হয়েছে এবং এই ঘটনাই ইসিএলের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থল স্কুলে এবং আশপাশের জায়গা নিরীক্ষণ করা হবে। সব মিলিয়ে একেবারে স্কুল প্রাঙ্গণে ধসের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও। ওই স্থান মাটি দিয়ে ভরাট করার পরও তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে সেটাই ভাবাচ্ছে অভিভাবকদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 3 =