হুগলির আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় নানা কালী মন্দির ঘিরে নানা জনশ্রুতি ও কথিত কাহিনি রয়েছে। আর মা কালীর মহিমায় সুখ শান্তি বিরাজ করে ওই সব এলাকায়। খানাকুলের রাধানগর এলাকার মা আনন্দময়ী কালী খুবই জাগ্রত এবং প্রসিদ্ধ। এই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন সাধক রামপ্রসাদ সেনের গুরুদেব কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। এমনটাই দাবি খানাকুলের আগমবাগীশ বংশের বর্তমান বংশের সৌরভ আগমবাগীশের।
জানা গেছে, আগমেশ্বরী মাতা হল নবদ্বীপে পূজিত কালী প্রতিমা। নবদ্বীপের সুপণ্ডিত তথা কালীসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ এই পুজো শুরু করেন। তারপর তিনি সাধনার জন্য ঘুরতে ঘুরতে তৎকালীন সময়ে খানাকুলের রাধানগরের মহাশ্মশানে চলে আসেন। আর এখানেও প্রতিষ্ঠা করেন আনন্দমী কালী মা। উল্লেখ্য, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ছিলেন সপ্তদশ শতকের এক উচ্চস্তরের তন্ত্রসাধক, যিনি নদিয়া জেলার নবদ্বীপ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তন্ত্রশাস্ত্রে সুপণ্ডিত এই তন্ত্রসাধক ১৭০ টি গ্রন্থ থেকে নির্যাস গ্রহণ করে বিখ্যাত ‘তন্ত্রসার’ গ্রন্থটি রচনা করেন এবং সমগ্র দেশে এই গ্রন্থটি সমাদৃত হয়। তাঁর প্রকৃত নাম কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য। তন্ত্র সাধনার আগম পদ্ধতিতে সিদ্ধি লাভ করে তিনি ‘আগমবাগীশ’ উপাধি পান। তিনি বাংলায় কালী সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন শ্রীশ্রী রামপ্রসাদ সেনের তন্ত্রগুরু। কথিত আছে বর্ধমানের মহারাজাকে তিনি অমাবস্যার দিন চাঁদ দেখিয়েছিলেন। মায়ের মহিমায় এই কাজ তিনি সম্পন্ন করেছিলেন বলে বর্ধমানের মহারাজ সন্তুষ্ট হয়ে তাকে জমি দান করেন। কিন্তু তিনি জমি গ্রহণ করেননি। সাধক রামপ্রসাদ সেনের গুরুদেব কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের সময় থেকেই তন্ত্র সাধনার মাধ্যমে নিষ্ঠা ভরে পুজো হয়ে আসছে আনন্দময়ী মা কালীর।
জানা গেছে, এই মায়ের সাধনার জন্য বিশেষ রীতিনীতি মেনে পুজোপাঠ হয়। প্রথমে মন্দির সংলগ্ন মহাশ্মশানে শোল মাছকে পুড়িয়ে অথবা চিংড়ি মাছকে পুড়িয়ে দিয়ে মায়ের আহ´ান বা পুজো পাঠ হয়। তারপর মূল মন্দিরে এসে মায়ের আরাধনা হয়। খানাকুলের রাধানগরের এই কালী পুজো প্রায় ৪০০ বছর ধরে চলে আসছে। একই রীতি ও নিয়ম মেনে খানাকুলের আগমবাগীশরা পুজো করছেন আনন্দময়ী মা কালীর।