বিলুপ্তির আশঙ্কায় আমতার পানিফল

নিজস্ব প্রতিবেদন, আমতা: পানিফল চাষ আজ বিশ বাও জলে! কারখানার বিষাক্ত জল খাদের পরিবেশ দূষিত করে তোলায় সেই চাষ আজ বন্ধ। অনেকে পানিফল চাষ করে লাভের মুখ কম দেখায় চাষ করাই ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও পানিফল চাষ কমে যাওয়ার বিষয়ে সমাজসেবী গৌতম জেলে শুধুমাত্র কারখানার জলকেই দায়ী করেননি, তিনি জানান, পানিফল চাষের ক্ষেত্রে প্রথমটায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। একবার গাছ ধরে গেলে তার সুফল পরে মেলে কিন্তু কোভিডের সময় এই চাষ বন্ধুই ছিল, ফলে গাছগুলো মরে যায়। কেভিড পরবর্তী সময়ে চাষিদের একাংশের হাতে টাকা একদম না থাকায় তাঁরা আর নতুন করে চাষে আগ্রহ দেখাননি। তবে বিষয়টি যাইহোক সহজ সস্তা মুখরোচক ফল হিসেবে পানিফলের কদর থাকলেও হাওড়ার পানিফল চাষ অনেকটাই সংকটে বলে জানা গিয়েছে চাষিদের কাছ থেকেই।
হেমন্ত ও শীতকালে রীতিমতো জনপ্রিয় একটি ফল। ত্রিভুজ আকৃতির ছোট্ট এই ফল কার্বোহাইড্রেডে ঠাসা। মসৃণ গায়ে তিনটে কাটা রয়েছে আত্মরক্ষার জন্য। বাঙালির জীবনে শীতের সময় সহজলভ্য ফল হিসেবে পানিফলের জুড়ি মেলা ভার। আর দামও যথেষ্টই কম। এখন পানিফল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। হাওড়ার পানিফল উৎপাদনের একমাত্র জায়গা হল আমতা এলাকার ভান্ডারগাছা গ্রাম পঞ্চায়েত ও খড়দহ। তবে বিক্ষিপ্ত হবে কয়েকটি জায়গায় পানিফল চাষ হয় এই জেলায়।
তথ্য অনুযায়ী, হাওড়া সবজি বাজারে যে পানিফল যায় তার কুড়ি শতাংশ সরবরাহ হয় এই এলাকা থেকে। কিন্তু সেই ফল আজ বিপন্ন। এক ধাক্কায় পানিফলের চাষ কমে গিয়েছে অনেকটাই। কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গিয়েছে, আমতা বাগনান রোড এবং আমতা উলুবেড়িয়া রোডে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন কারখানা। যার জল খালের মাধ্যমে গিয়ে পানিফলের জন্য উপযুক্ত খাদ নষ্ট করে দিয়েছে। বলাই বাহুল্য আমতা উলুবেড়িয়া রুটের দু’ধারে খাদে স্থানীয় চাষিরা ভাগাভাগি করে চাষ করতেন এই পানিফল। কিন্তু খাদের জল বিষাক্ত হয়ে যাওয়ায় সেই চাষ উঠে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে নিজেদের জমিতে জল সেচে তৈরি করেছে পানিফলের খেত।
জানা গিয়েছে, এক হাঁটু কাঁদা জলে -যেখানে শামুক গুগলি জন্মাতে পারবে না এবং ঝাঁঝি জন্মাতে পারবে না সেখানে ভালো চাষ হয় পানিফলের। আর এমনই বেশ কিছু খেত তৈরি রয়েছে ভান্ডারগাছা এলাকায়। বাজার থেকে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পিস দরে গাছ কিনে এনে ওই খেতে ধানের মতো করে চাষিরা বপন করে। ৫ থেকে ৬ ফুট ছাড়া ছাড়া বপন করা হয় পাি ফলের গাছ। কচুরিপানার মতো দেখতে ছোট ছোট গাছ জন্মায় পুরো খেত জুড়ে। গোড়ায় জন্মায় ফল। জলে নেমে সেই ফল তুলে বাজারে বিক্রি করেন চাষিরা। দিঘা প্রতি পঞ্চাশ থেকে সাতটি চারা লাগে বলে জানা গিয়েছে। তবে গাছের বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত দেখভাল করা এবং সার দিতে হয়। তারপর মেলে পানিফল। খেতে পাশাপাশি খাদে পানিফল চাষ করায় বেশ কিছুটা অতিরিক্ত আয় করতেন চাষিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − nine =