এশিয়া কাপের দল নির্বাচনের আগে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং নির্বাচক কমিটির সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে ফর্ম বা ইনজুরির কারণে নয়, বরং অনেক ফিট এবং ফর্মে থাকা ক্রিকেটারদের ভিড়ের কারণে দল সাজানো কঠিন হয়ে উঠেছে। নির্বাচকদের হাতে একাধিক বিকল্প থাকলেও, কাকে জায়গা দেওয়া হবে আর কাকে বাদ দিতে হবে—এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রথমেই আসে শুভমান গিলের নাম। সাম্প্রতিক ইংল্যান্ড সফরে তিনি ৭৫৪ রান করে দেশে ফিরেছেন এবং প্রমাণ করেছেন, বড় মঞ্চে তাঁর ব্যাট থেকে রান বের হয়। টেস্টে যেমন ধারাবাহিক, তেমনি আইপিএলেও দুর্দান্ত ফর্ম দেখিয়েছেন। প্রায় ছ’শো রান করেছেন, তাও আবার দেড়শোরও বেশি স্ট্রাইক রেটে। অথচ সমস্যা হচ্ছে, টি-টোয়েন্টিতে তাঁর জায়গা কোথায় হবে? ওপেনিংয়ে ইতিমধ্যেই সঞ্জু স্যামসন ও অভিষেক শর্মা সেট হয়ে গিয়েছেন। মাঝের সারিতে রয়েছেন সূর্যকুমার যাদব, তিলক বর্মা, শিবম দুবে, রিঙ্কু সিং এবং হার্দিক পাণ্ডিয়ার মতো নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়রা। তাই গিলকে দলে রাখা সহজ নয়, আবার বাদ দেওয়াও কঠিন।
বোলিং বিভাগে একই সমস্যা। বুমরাহকে রাখা হবেই—এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। তিনি ফিট মানেই, ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলে তাঁর উপস্থিতি অনিবার্য। কিন্তু সিরাজকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ইংল্যান্ড সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন তিনিই, আবার সবচেয়ে বেশি ওভারও করেছেন। তবে তাঁর আইপিএল ততটা উজ্জ্বল ছিল না। ১৫ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন মাত্র। অন্যদিকে প্রসিদ্ধ কৃষ আইপিএলে অনেক বেশি কার্যকর ছিলেন—২৫ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন। তাই নির্বাচকদের ভাবতেই হবে, সিরাজকে কি নেওয়া উচিত নাকি অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া উচিত।
অন্যদিকে, যশস্বী জয়সওয়াল এবং শ্রেয়স আইয়ারের নামও নির্বাচনের তালিকায় ভাসছে। দু’জনই প্রতিভাবান এবং ফর্মে থাকা ক্রিকেটার। কিন্তু সমস্যাটা হল, দু’জনকেই একসঙ্গে স্কোয়াডে জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে নির্বাচকদের কাউকে বেছে নিতে হবে পরিস্থিতি ও টিম কম্বিনেশনের ভিত্তিতে।
সব মিলিয়ে ভারতীয় দলে আজ প্রাচুর্যের সমস্যা। ব্যাটসম্যান থেকে বোলার, প্রতিটি জায়গায় একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। এশিয়া কাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্ভাব্য তিনবার মুখোমুখি হওয়ার চাপও নির্বাচকদের কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়েছে। কারণ, দেশবাসীর আশা থাকবে যে, পাকিস্তানকে হারিয়েই ট্রফি জিতুক ভারত। তাই গিল, সিরাজ, বুমরাহ, জয়সওয়াল, আইয়ার—সবাই নির্বাচযোগ্য হলেও, ফাইনাল স্কোয়াডে কারা থাকবেন আর কারা বাদ পড়বেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
অতএব, বলা যায় এশিয়া কাপের দল নির্বাচন নিছকই রুটিন কাজ নয়, বরং একটি কঠিন অঙ্ক। একদিকে অভিজ্ঞতা ও ধারাবাহিকতা, অন্যদিকে তরুণ প্রতিভা ও সাম্প্রতিক ফর্ম—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই নির্বাচকদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

