২ বছরের শিশু মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ তুলে গত রবিবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালিয়ে ছিল পরিবারের সদস্যরা। এবার, মৃত শিশুর পরিবারের তরফ থেকে জরুরি বিভাগে সেইদিন কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ অনিন্দ্য রায়কে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল। এই হুমকির পরে রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স সহ স্বাস্থ্য কর্মীরা। তারা হাসপাতালে কাজ করতে এসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গোটা বিষয়টি জানিয়ে বুধবার বিকেলে মৃত শিশুর পরিবারের সদস্যদের নামে আসানসোল দক্ষিণ থানায় এফআইআর করেছেন জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার ডাঃ শঙ্করী মাজি। এদিন বিকেলে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ইউনুস খানের সঙ্গে দেখা করে হাসপাতালে নিরাপত্তা বাড়ানোর আর্জি জানান। পাশাপাশি চিকিৎসকরা গোটা বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ ও আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার এন সুধীর কুমার নীলকান্তমের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান। জানা গিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই ডাঃ অনিন্দ্য রায় জেলা হাসপাতালে আসা বন্ধ করেছেন। তিনি হাসপাতালে আসতে ভয় পাচ্ছেন বলে সুপারকে জানিয়েছেন। হাসপাতাল সুপার গোটা পরিস্থিতি বিচার করে ওই চিকিৎসককে আপাতত ছুটিতে যেতে বলেছেন। চিকিৎসক না আসায় বৃহস্পতিবার ও শনিবার স্কিন বিভাগের আউটডোর বন্ধ থাকবে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। বুধবার দুপুরে জেলা হাসপাতালের ডিএনবি কনফারেন্স হলে ভারপ্রাপ্ত সুপার ডাঃ শঙ্করী মাজি, ডেপুটি সুপার কঙ্কন রায়ের উপস্থিতিতে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পরে, ডাঃ সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় ও ডাঃ রুদ্রনীল লাহিড়ি বলেন, ১০ জুলাইয়ের ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দপ্তরের তিন সদস্যের কমিটি মৃত শিশুর পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য শুনছিলেন। তখন তারা কমিটির সদস্যদের সামনেই ওই চিকিৎসককে প্রাণে মারার হুমকি দেন। তা আমরা জানার পর থেকে আতঙ্কিত হয়ে পরেছি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পরিষেবা দিতে এসে মৃত্যুর হুমকি পেতে হবে? এটা মেনে নেওয়া যায় না। গত ১০ দিনে মোট তিনটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা কাজ বন্ধ করতে কোনওদিনই চাই না। কিন্তু, প্রতি ক্ষেত্রে যদি এই রকম হুমকি পেতে হয়, তাহলে আমাদেরও অন্য কিছু ভাবতে হবে। তারা আরো বলেন, যদি চিকিৎসায় গাফিলতি হয়, তার জন্য আইন রয়েছে। আমরা এদিন সিএমওএইচের সঙ্গে দেখা করে হাসপাতালে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি করেছি। একই দাবি, আমরা জেলাশাসক ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে জানাব। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, আইএমএর আসানসোল শাখার সম্পাদক ডাঃ রহুল আমিন। তিনি বলেন, এইভাবে হুমকি পাওয়া সত্যি চিন্তার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সেদিন ঘটনার পরে পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও ইমারজেন্সি বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ায় জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের করা। সেদিনই অভিযোগ জানালে হয়তো এমন হত না। আইএমএ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশে আছে।
ভারপ্রাপ্ত সুপার বলেন, এদিন গোটা ঘটনা ও চিকিৎসককে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ার কথা জানিয়ে থানায় এফআইআর করেছি। আশা করি, পুলিশ প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ নেবে। মৃত শিশুর এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, পরিবারের সদস্যদের দাবি মতো, যা করার করেছি। স্বাস্থ্য দপ্তর তদন্ত করেছে। তাতে কিছু গাফিলতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু, কাউকে হুমকি দিয়ে আইন কেউ হাতে নিতে চাইলে তার দায় নেওয়া হবে না। সেক্ষেত্রে পুলিশ আইন মতো পদক্ষেপ নেবে। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই সিএমওএইচ তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন। তাতে শিশু মৃত্যুতে কোনও চিকিৎসায় গাফিলতির প্রমাণ মেলেনি। চিকিৎসকের লেখা ওষুধে কিছু হয়নি। শ্বাসনালীতে দুধ আটকে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে, ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে। আর তা হয়েছে শিশুর বাড়িতেই। সিএমওএইচ বলেন, চিকিৎসকদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ আধিকারিকদের তা জানানো হবে।