সিএবি সভাপতির পর আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের পদও রইল না অভিষেক ডালমিয়ার

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গেল। মঙ্গলবার বিকেলে বোর্ডের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হল মনোনীত প্রার্থীদের নামের তালিকা। সভাপতি-সহ বিভিন্ন পদে যাঁদের নাম আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, তাঁরাই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় চমক এসেছে আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল নিয়ে। সেখানে বাংলার অভিষেক ডালমিয়ার জায়গা আর থাকল না। তাঁর পরিবর্তে নতুন মুখ হিসাবে আসছেন মিজোরামের মামন খয়রুল জামাল মজুমদার। চেয়ারম্যান হিসাবে অরুণ ধুমলকে রেখে দেওয়া হয়েছে। সচিবের দায়িত্বে থাকছেন দেবজিৎ শইকীয়া এবং কোষাধ্যক্ষ হিসাবে থাকছেন প্রভতেজ সিংহ ভাটিয়া। এই পরিবর্তনের ফলে আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিনিধি নিশ্চিত হল। বোর্ড মহলে শোনা যাচ্ছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আরও বেশি করে মূল স্রোতে আনার জন্যই এই পদক্ষেপ

কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ নজর যেহেতু ওই অঞ্চলের দিকে, তাই বোর্ডের প্রশাসনিক কাঠামোয়ও উত্তর-পূর্ব থেকে প্রতিনিধি আনা হয়েছে। অভিষেক ডালমিয়া আগে থেকেই সিএবি সভাপতি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে সিএবি-তে কোনও নির্বাচন হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সৌরভ দ্বিতীয় বারের জন্য সভাপতি হয়েছেন। এর ফলে অভিষেক কার্যত সব দিক থেকেই ব্যর্থ হলেন। সিএবি সভাপতি হতে পারলেন না, আবার আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের আসনটিও হারালেন। ফলে আপাতত তাঁর হাতে কোনও পদই রইল না। বিসিসিআইয়ের নতুন কমিটিতে আরও একটি অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন এসেছে যুগ্ম সচিব পদে। বোর্ডের যুগ্ম সচিব রোহন দেশাইকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি গোয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে তাঁর প্যানেল হেরে যাওয়ার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল। অবশেষে সেই জল্পনা সত্যি হল। রোহনের জায়গায় আসছেন প্রভতেজ সিংহ ভাটিয়া, যিনি এর আগে বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। নতুন কমিটির জন্য মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা হলো এইরকম— সভাপতি পদে মিঠুন মনহাস, সহ-সভাপতি পদে রাজীব শুক্ল, সচিব দেবজিৎ শইকীয়া, যুগ্ম সচিব প্রভতেজ সিংহ ভাটিয়া, কোষাধ্যক্ষ রঘুরাম ভাট, অ্যাপেক্স কাউন্সিল সদস্য জয়দেব শাহ, আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল সদস্য অরুণ ধুমল এবং মামন মজুমদার।

এই তালিকায় কোনও অপ্রত্যাশিত নাম না থাকলেও কয়েকজনের জায়গা বদল অবশ্যই আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মিঠুন মনহাসকে সভাপতি পদে মনোনয়ন দেওয়াকে অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রভাব হিসেবেই দেখছেন। রাজীব শুক্লর সহ-সভাপতি পদে প্রত্যাবর্তনও প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু উত্তর-পূর্ব থেকে প্রতিনিধি হিসাবে মামন মজুমদারের অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। কেন্দ্র চাইছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে উত্তর-পূর্বের উপস্থিতি দৃশ্যমান হোক। সব মিলিয়ে, বিসিসিআইয়ের নতুন কমিটি গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার ভারসাম্য অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেল। একদিকে অভিষেক ডালমিয়ার মতো তরুণ প্রশাসক পদ হারালেন, অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য জায়গা তৈরি হল। রোহন দেশাইয়ের বিদায়ও বোঝাল, নির্বাচনে ব্যর্থতা বোর্ডের পদে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। আরেক দিক থেকে বলা যায়, বোর্ডের উপর কেন্দ্রের প্রভাব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ফলে ক্রিকেট প্রশাসনে রাজনৈতিক ছায়া আরও গভীর হল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + 20 =