প্রতি বছরই তাঁর বাড়িতে ভাইফোঁটায় ফোঁটা নিতে আসেন ভাইয়েরা। তিনি নেত্রী হতেই পারেন। তবে তিনি অনেকের কাছেই দিদি।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে ভাইফোঁটায় এবার অন্য ছবি। ৮ বছর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ভাইফোঁটা নিতে গেলেন দলের বর্ষীয়ান নেতা মুকুল রায় । যাঁর মন্তব্য নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতেই তৃণমূলকে বারবার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। একইসঙ্গে দিদি-র বাড়ি দেখা গেল শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। সঙ্গে বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক দূরত্ব ভুলে এমন ছবিতে সকলেই খুশি।
মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে শেষবার জমজমাট ভাইফোঁটা হয়েছিল ২০১৯ সালে। তারপর কোভিডের জেরে ২ বছর সেভাবে অনুষ্ঠান হয়নি। এবছর আবার হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়িতে ভাইফোঁটায় জনসমাগম। আর সেখানেই দেখা গেল মুকুল রায়ের পাশাপাশি মমতা ব¨্যােপাধ্যায়ের সাধের কানন মানে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাই স্নেহে দেখেন শোভন চট্টোপাধ্যায়কে । এরপর বৈশাখীর সঙ্গে সম্পর্ক ঘিরেও মমতা ব¨্যােপাধ্যায় কিছুক্ষা ক্ষুন্ন হয়েছিলেন বলে শোনা যায়। একসময় স্নেহের শোভনের সঙ্গে মমতা ও দলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র যোগদান করেন গেরুয়া শিবিরে। সেই সময় সম্পর্কের একটু টানাপোড়েন হয়।
যদিও ভাইফোঁটাকে ‘পারিবারিক অনুষ্ঠান’ বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভাইফোঁটা সেরে বেশ হাসিমুখে বের হন সাদা পাঞ্জাবি পরা শোভন চট্টোপাধ্যায় । বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শোভন ভাইফোঁটা পেল, আমি আশীর্বাদ পেলাম। মমতার মমত্ব এত বেশি, উনি সবাইকে খাওয়াচ্ছেন। ওঁদের মধ্যে একটা টান সবসময় রয়েছে। ভাইবোনের এই সম্পর্ক ছিলই, মাঝে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। অভিমানের মেঘ কেটে গিয়েছে।’ তবে শোভন-বৈশাখী একসঙ্গে গত বছর ভাইফোঁটায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। ফোঁটা নিয়ে হাতভরা উপহার নিয়ে ফিরেছিলেন। সেবার থেকেই উভয়ের সম্পর্ক ফের স্বাভাবিক হতে শুরু করে। আর এবছরও প্রিয় ‘কানন’কে ভাইফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ করলেন ‘দিদি’।
তবে এবার চর্চায় ছিলেন মুকুল রায়। ৮ বছর পর এবার কালীঘাটের বাড়িতে তাঁর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে। তিনি দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। ২০২১ এ বিধানসভা ভোটের পর বিজেপি থেকে ফের তৃণমূলে ফেরার পর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, দলের কোন গুরুদায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হবে। যদিও মুকুল রায়ের দলীয় অবস্থান নিয়ে পরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। তৃণমূল ভবনে তাঁকে গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তারপরও মুকুলের একাধিক মন্তব্যে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তৃণমূলকে। তারপর থেকেই ক্রমশ মুকুলের সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। এদিকে মুকুল কোন দলে রয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্নও তৈরি হয়। বিধানসভার দু’দফার শুনানি পর অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন যে মুকুল কোনও দলবদল করেননি। বিজেপিতেই রয়েছেন। ফলত সবটা মিলিয়েই তাঁকে ঘিরে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এরপর আজ তিনিও ভাই-ফোঁটা নিতে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে। যেটা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
সাধারণত মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মধ্যেই পালিত হয়। এবার মুকুল রায় সেখানে উপস্থিত হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে ফের জল্পনা শুরু হয়েছে, মুকুল ফের মমতার ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ঢুকে পড়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কি তবে বড় কোনও দায়িত্ব পেতে চলেছেন মুকুল রায়?