সুদীপ মহাপাত্র
সরকারি দপ্তর এর সমন্বয় এর অভাবে এবং ক্রেতাদের অসাবধানতায় গজিয়ে উঠছে বেআইনি বড় আবাসন প্রকল্প। লোভনীয় স্কিমে ফেলে ক্রেতাদের আকর্ষিত করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে ফ্ল্যাট জমি বা বাড়ি। ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর আইনি জটিলতাতে পরতে পারেন এই সব ক্রেতারা। সাবধানী পদক্ষেপ না নিলে কার্যত উত্তরপ্রদেশের নয়ডার হাল হতে পারে শিল্পাঞ্চলে গজিয়ে ওঠা অনেক বহুতলের।
প্রসঙ্গে কথা বলতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনই কথা বলেন আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তাপস বন্দোপাধ্যায়। উন্নয়ন পর্ষদের দুর্গাপুরের নিজস্ব ভবনে ভাইস চেয়ারম্যান কবি দত্তকে সঙ্গে নিয়ে পর্ষদের উন্নয়নের খতিয়ান পেশ করেন। শিল্পতালুকের একাধিক রাস্তা পুনর্নির্মাণ সহ বিভিন্ন পরিকাঠামোতে আনুমানিক ৩৭ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, সঙ্গে নজরুল বিমান বন্দরে সৌন্দর্যকরণে ৮০ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়েছে।
সম্মলেনে তাপস বন্দোপাধ্যায় জানান, পশ্চিম বর্ধমান জেলার কয়লাখনি অঞ্চলের কিছু জমি বাদ দিলে সম্পূর্ণটাই আসানসোল উন্নয়ন পর্ষদের আওতায়। আর এই জমি নিয়েই একটা বড় জট সৃষ্টি হয়ে আসছে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এবং তার ফলে রাজ্যের রাজস্ব ক্ষতি কয়েক হাজার কোটি টাকা। সেই ক্ষতির পরিমাণ দ্রুততার সঙ্গে কমানোর চেষ্টায় এবার কড়া মনোভাব পর্ষদের। চিহ্নিতকরণ শুরু হয়েছে এবং আসানসোল ও দুর্গাপুর দুই কর্পোরেশনের সঙ্গে ভূমি রাজস্ব দপ্তরের সমন্বয় কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান কবি দত্ত।
পর্ষদের দাবি, প্রথমে দায়িত্ব নিয়ে দেখা হচ্ছে শহর বা মফঃস্বল এলাকার গজিয়ে ওঠা ছোট বড় বা মাঝারি প্রকল্পগুলোর দিকে। আধিকারিকদের চক্ষু চড়কগাছ যে কেবল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলেই ২৯ টি সংস্থা রয়েছে যারা ফ্ল্যাট, বাড়ি বা জমি ইতিমধ্যে বহু ক্রেতাদের হস্তান্তর করে দিয়েছেন অথচ প্রয়োজনীয় পর্ষদের ছাড়পত্র না নিয়েই। কার্যত ক্রেতাদের অন্ধকারে রেখেই এই কাজ করা হয়েছে। এবং বহু ক্ষেত্রে তারা পঞ্চায়েত বা কর্পোরেশন থেকে প্ল্যান পাশ করিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে একটা অশুভ আঁতাঁতের ইঙ্গিত মিলছে এই সব ক্ষেত্রে। এক আধিকারিকের কথায় এই সব প্রকল্পে প্রায় সাড়ে চারশো কোটি টাকা লগ্নি হয়েছে এবং এক বিশাল পরিমানে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। প্রমোটার বা বিল্ডার কাজ শেষে বেরিয়ে যাবে এবং সমস্যায় পড়বেন কষ্টার্জিত আয়ের সাধারণ ক্রেতারা।
আবেদন করেছেন পর্ষদের তরফ থেকে ক্রেতাদের। ফ্ল্যাট জমি কেনার আগে পর্ষদের এবং লগ্নি করার আগে জমির সব ছাড়পত্র দেখে যাচাই করে নিতে এবং সেক্ষেত্রে পর্ষদের যে কোনও দপ্তর বা আধিকারিকের সাহায্য পেতে পারেন।
বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, উন্নয়ন পর্ষদের এই পদক্ষেপের ফলে জোড়া সুবিধে। গ্রাহক বা ক্রেতারা সুরক্ষিত থাকবেন এবং রাজস্ব বাড়বে। অসাধু চক্রকে ভাঙার এই উদ্যোগকে এবং আসানসোল উন্নয়ন পর্ষদ কে সাধুবাদ দেন তিনি।